বাড্ডা-বনশ্রীসহ ২০ এলাকার পয়ঃবর্জ্য শোধনে কাজ করছে ওয়াসা
ওয়াসা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা থাকলেও, বর্তমানে নাগরিক সমস্যা সমাধানে সংস্থাটি নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাদের লক্ষ্য, ওয়াসার কারণে যেন আর নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে না হয়। সে লক্ষ্যে বড় পরিসরে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি।
১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সেবামূলক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি ‘ওয়াসা অ্যাক্ট ১৯৯৬’ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ সেবাদান কাজের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত। এছাড়া অন্যান্য সেবাদান সংস্থার সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আংশিক দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসা পালন করেছে। সেই দায়িত্ব থেকে নাগরিক ভোগান্তি লাঘবে ঢাকা ওয়াসার আওতায় প্রণীত সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে ৫ এলাকায় পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে আফতাব নগর সংলগ্ন দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
নগরবাসীকে সুখবর জানিয়ে ওয়াসা বলছে, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রাবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাব নগর, নিকেতন, সাতারকুল, হাতিরঝিল ও আশপাশের এলাকাসহ প্রায় ২০ এলাকায় সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশিত হওয়ার মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ সম্ভব। এছাড়া হাতিরঝিল প্রকল্পের গুণগতমান উন্নয়নসহ সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্ট শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ কমানো সম্ভব হবে। এই ২০ এলাকার পয়ঃবর্জ্য শোধনে দ্রুত কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক চলতি বছরের মধ্যে পয়ঃশোধনাগার চালু করা যাবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আশা।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ওয়াসা। ৩ হাজার ৩১৭ কোটি ব্যয়ে প্রকল্পটির উদ্দেশ্যে ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন প্রণীত সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে পাগলা, দাশেরকান্দি, রায়েরবাজার, উত্তরা ও মিরপুর এলাকায় মোট পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী মহসিন আলী মিয়া জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মোট ৬২ দশমিক ৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম সম্পন্ন করে ঢাকা ওয়াসার কাছে দখল হস্তান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের আগস্টে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আশা করা যায় স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক ২০২০ সালের মধ্যে এটি চালু করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি করছে হাইড্রো চায়না করপোরেশন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের দফতরের মাধ্যমে মাধ্যেমে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এছাড়া প্রকল্প এলাকা খুবই নিচু হওয়ায় প্রায় সারা বছরই পানিতে ডুবে থাকতো। তাই ভরাট কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেশি সময় লাগে। প্রকল্প এলাকায় প্রায় ২০ ফুট গভীরতায় বালু ভরাট করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরে ২৩০ কেভি দুটি হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইনের টাওয়ার বিদ্যমান ছিল। প্রকল্প সঠিকভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ওই দুটি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফুজিয়ান ইলেক্ট্রিক কোম্পানির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার দুই পাশে সীমানা বরাবর স্থানান্তর করা হয়েছে। এই কাজে প্রায় ১০ মাস সময় ব্যয় হয়। সেই সঙ্গে পুরো প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোরিয়ান হাংকক ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না করপোরেশন পরবর্তী এক বছর তত্ত্বাবধান ও দেখভাল করছে।
এছাড়া সম্প্রতি অর্জনগুলোর মধ্যে কী কী রয়েছে– এমন তথ্য জানাতে গিয়ে ওয়াসা সূত্র বলে, ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের জন্য তিনটি আলাদা আলাদা মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে ওয়াটার মাস্টার প্ল্যান, সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান ও ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মাস্টার প্ল্যান অনুসারে উন্নয়ন কার্যক্রম স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর মাস্টার প্ল্যানের আলোকে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৭ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর বর্তমান বিনিয়োগ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বড় প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নে ঢাকা ওয়াসা সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে দাবি তাদের। এর আলোকে তিনটি বৃহৎ পানি শোধনাগার প্রকল্প নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছিল সংস্থাটি।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে– পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্প, গন্ধবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩)। নদীর উৎস হতে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতা সম্পন্ন পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্প চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮ সালে সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে মোট প্রকল্প ব্যয় ৩৩৭৫ কোটি টাকা।
গন্ধবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে মেঘনা নদীর উৎস হতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হবে। এডিবি, ইআইবি ও এএফডি’র আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা ২০২৩ সাল নাগাদ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পটির মোট প্রকল্প ব্যয় ৫২৫০ কোটি টাকা।
ড্যানিডা, ইআইবি, কেএফডি ও এএফডি’র আর্থিক সহায়তায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মেঘনা নদীর উৎস হতে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হবে। মোট প্রকল্প ব্যয় ৪৬০০ কোটি টাকা।
এছাড়া বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সাভারের ‘তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা ওয়েলফিল্ড নির্মাণ প্রকল্প’ নামে আরও একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে কোরিয়া সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি কাজ ২০১৮ সাল নাগাদ সম্পন্ন হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয় হয় ৫৭৩ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে নগরীতে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে বলে বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এএস/এমএসএইচ/এমএস