হাসপাতালে সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নয়!
যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকা এবং জরুরি অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তা করতে হবে।
হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার জন্য আদেশক্রমে অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল (৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
‘দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পরিচালনা’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, ‘করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর দেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সদস্য নানা বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। একটি হাসপাতালে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করাতে তাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং এ কারণে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে একধরনের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।’
‘ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সার্বিক কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করার জন্য একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে জননিরাপত্তা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে আছেন। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো অপারেশন পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা করা যাবে।’
এ অবস্থায় যেকোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকা এবং জরুরি অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাথে সমন্বয়ে পরিচালনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহামারি করোনা চলাকালীন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরা পড়ে। বিশেষ করে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করোনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। এরই জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানকালেও লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় বছরের পর বছর হাসপাতাল পরিচালনার অনিয়ম ধরা পড়ে।
বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা অভিযানকালে ধরা পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চাপের মুখে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেন এবং হাসপাতাল পরিচালকসহ একাধিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওএসডি হন।
অভিযান পরিচালনার ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। বিভিন্ন হাসপাতালের মালিকরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর কাছে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা না করলে হাসপাতালের অনিয়ম কখনোই সামনে আসত না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে অভিযান পরিচালনা করলে তা কখনোই ফলপ্রসূ হবে না। টাস্কফোর্স কমিটিতে জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব থাকলেও হাসপাতালের অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরার ক্ষেত্রে অভিযানের বিকল্প নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।
এমইউ/এমএআর/এমএস