এবার মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সমাবেশে হামলা, আহত ১০
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে দাফনের আগে গার্ড অব অনার না দেওয়া, বাঁশখালীর এমপি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি করার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে হামলা হয়েছে।
এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে। হামলার সময় স্থানীয় সাংবাদিক তাজুল ইসলাম পলাশ আহত হয়। সোমবার (৩ আগস্ট) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রেমবাজার এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে।
মৌলভী সৈয়দের পরিবারের উদ্যোগে স্থানীয়দের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সমাবেশে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে মৌলভী সৈয়দের গ্রামে যাওয়ার পথে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ওই গ্রাম অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। হামলার ঘটনায় আহত হয়েছে ১০-১২ জন গ্রামবাসী।
জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলভী সৈয়দ আহমদের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ও বাঁশখালী থানা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির শ্রম সম্পাদক ডা. আলী আশরাফ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
পরদিন ২৭ জুলাই ২০২০ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার ছাড়াই দাফন করা হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
গত ২৭ জুলাই ২০২০ রাত ১০টার দিকে গণমাধ্যমে ডা. আলী আশরাফ মুক্তিযোদ্ধা নন, থানা আওয়ামী লীগের কমিটির কেউ নন এবং বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি উল্লেখ করে মন্তব্য করেন স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। যার কল রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এমন মন্তব্যের পর বাঁশখালীজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এসব বিষয় নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের সমালোচনা করায় মৌলভী সৈয়দের ভাইপো ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেন সাংসদ মোস্তাফিজ। এরপর সাংসদের অনুসারী মোরশেদুর রহমান নাদিম বাদী হয়ে ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিকেল ৪টার দিলে বাঁশখালীর প্রেমবাজার চত্বরে স্থানীয়রা প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ চলাকালে সাংসদ মোস্তাফিজের অনুসারী স্থানীয় ১১ নম্বর পুইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজল কবিরের নেতৃত্বে এতে হামলা চালায় আব্দুল খালেক, কুতুবউদ্দিন, রোখসানা আক্তার, লোকমান, মিন্টু, রাজু, ওসমান, বুলবুলি, শফিউল আলম, কাশেম, বাহাদুর, রানা, জসিম, কালিপুর ইউনিয়নের মোরশেদুর রহমান, ৭ নম্বর সরল ইউনিয়নের ফাহিম চৌধুরী, শেখেরখীল ইউনিয়নের মিজান তালুকদার, ওমর আলীসহ ২০-৩০ জন অস্ত্রধারী।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন- বাঁশখালী তাঁতী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভী সৈয়দের ভাইপো জহির উদ্দিন বাবর, বাঁশখালী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন পিটু, বাঁশখালী ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান, আনসারুল হকসহ আরও কয়েকজন।
এ বিষয়ে মৌলভী সৈয়দের ভাইপো জহির উদ্দিন বাবর বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে গার্ড অব অনার না দেওয়া, বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমপি সাহেবের কটূক্তির প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলাম। এ সময় এমপির অনুসারীরা অস্ত্র হাতে আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
এতে আমিসহ স্থানীয় ১০-১২ জন আহত হই। এমপির নগ্ন এসব রাজনীতির প্রতিবাদ করায় আমার ভাই সাংবাদিক ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে এমপি মোস্তাফিজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাঁশখালী থানায় মিথ্যা মামলা করিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মৌলভী সৈয়দের পরিবারকে এমপি বাঁশখালী থেকে উৎখাত করতে চায়। আমরা এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, মৌলভী সৈয়দের পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় সাংসদের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। আমাদের ফোর্স মৌলভী সৈয়দ পরিবার আয়োজিত সমাবেশ প্রটেকশন দিচ্ছিল। তাই সংঘর্ষ বড় হয়নি।
আবু আজাদ/এমআরএম