আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যেতে পারে
জোয়ার না থাকলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
শনিবার (২৫ জুলাই) সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল বন্যার। গত ২৬ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়, ১১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ে এবং ২১ জুলাই থেকে তৃতীয় দফায় পানি বাড়ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস তুলে ধরে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের ১৬টি জেলায় আরও দুদিন বন্যার পানি বাড়বে। ২৭ জুলাই পর্যন্ত পানি বাড়ার পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সমুদ্রে জোয়ার থাকলে মধ্যাঞ্চলের পানি কমতে বিলম্বিত হতে পারে। জোয়ার না থাকলে হয়তো আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে পানি নেমে যেতে পারে।’
মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, ঢাকা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জমালাপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও দুদিন অবনতি হবে, তারপর পানি কমতে থাকবে বলেও জানান তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে, এটা কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মার পানি বাড়তে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি কমছে। ঢাকা জেলার আশপাশের নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে।’
বন্যায় ত্রাণসহায়তা তদারকি করতে ছয়টি কমিটি করার কথা জানিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করবে। আগামী ২১ দিন তারা এই দায়িত্ব পালন করবে। এরা মাঠ পর্যায়ের যে কোনো সমস্যা সমাধান করবেন এবং যে কোনো চাহিদা পূরণে আমাদের জানাবেন, আমরা সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেব।
তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য গত ২৮ জুন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, ৫২ হাজার ১০ টন চাল, এক লাখ ২১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট, গো-খাদ্য কিনতে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কিনতে আরও ৭০ লাখ টাকা দিয়েছি। কয়েক জায়গায় ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে, সেগুলো নির্মাণের জন্য ৩০০ বান্ডিল টিন এবং ৯০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।’
দেশে ৩১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। ১৪৭টি উপজেলায় আট লাখ ৬৫ হাজার ৮০০টি পরিবারের ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এক হাজার ৫১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেখানে ৮৮ হাজার ৬২ জন আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানান এনামুর রহমান।
কোথাও কোনো ত্রাণের সংকট নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বন্যাকবলিত দেশবাসীকে জানাতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে সব সময় আছেন। তিনি সব সময় আমাদের কার্যক্রম তদারকি করছেন, আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, আমরা তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাছে যেমন পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে, তেমনি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও পর্যাপ্ত মজুত আছে।’
৩৩৩ নম্বরের সঙ্গে সব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ট্যাগ করে দেয়া হয়েছে। কোথাও যদি কেউ খাদ্যে কষ্ট পায় ৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করলে সেখানে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
আরএমএম/এমএফ/এমকেএইচ