নির্দিষ্ট সময়ে উপনির্বাচন শেষ করতে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ
শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন শেষ করতে করোনাকাল বাধা হওয়ায় এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির মতামতের জন্য চিঠি পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ প্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা আসে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতির এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেই করোনাকালের মধ্যেই বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন শেষ করেছে ইসি। অন্যদিকে পাবনা-৪, ঢাকা-৫, সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনের জন্য কমিশন বৈঠকে বসছে ইসি। সোমবার বিকেল ৩টায় এই বৈঠক শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা পাওয়ার পর দুটি সংসদীয় আসনের নির্বাচন শেষ করেছি। আর পাবনা-৪ ও ঢাকা-৫ আসন শূন্য হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারায় সংবিধানের দৈব দুর্বিপাকের বিধান কাজে লাগিয়ে নির্বাচন ৯০ দিন পেছানো সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যেই শেষ করতে চায় ইসি।’
কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সংবিধানে এ-ও বলা আছে ‘দৈব-দুর্বিপাকের কারণে’ উপনির্বাচন করার জন্য আরও ৯০ দিন পাওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশন সেই সুযোগ নেয়ার পর রাষ্ট্রপতির মতামত চায়। এই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করার নির্দেশনা দেন। অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করতে হবে। এ জন্য এই দুটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন শেষ হয়। আর বাকিগুলোও নির্দিষ্ট সময়েরে মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি।
আগামীকাল অনুষ্ঠেয় ৬৬তম কমিশন সভার জন্য তৈরি কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের (৪) দফার শর্তানুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে দেশে করোনাসংক্রমণজনিত দুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ শূন্য আসনের নির্বাচন সম্ভব না হওয়ায় পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২৯ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে ২১ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।’
‘করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির বিদ্যমান অবস্থায় পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে প্রেরণ করা হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হলে সংবিধানে জাতীয় সংসদের শূন্য আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকায় সংবিধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সমীচীন হবে মর্মে নির্দেশনা দেয়া হয়।’
‘উক্ত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৪ জুলাই বগুড়া-১ ও যশোর-৬ শূন্য আসন নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে মৃত্যুজনিত কারণে জাতীয় সংসদের পাবনা-৪ আসনে ২ এপ্রিল থেকে এবং ঢাকা-৫ আসন ৬ মে থেকে শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এ দুটি শূন্য আসনে নির্ধারিত মেয়াদের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে সিরাজগঞ্জ-১ আসন ১৩ জুন থেকে শূন্য ঘোষণা করে ১৭ জুনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং সর্বশেষ ঢাকা-১৮ আসন জুলাই থেকে শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।’
‘সদ্য শূন্য ঘোষিত ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত প্রদানের প্রয়োজন হলেও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান বা সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে নির্ধারিত মেয়াদের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে সত্বর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অনুযায়ী সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করতে হবে। করোনাকাল হলেও এই সময়ে মধ্যে নির্বাচন শেষ করবে ইসি।’
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু মারা যাওয়ায় পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসন শূন্য হয়। ৬ মে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে ঢাকা-৫ (ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল) শূন্য হয়।
১৩ জুন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ায় সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসনটি শূন্য হয়। অন্যদিকে গত ১০ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা যাওয়ায় ঢাকা-১৮ আসন (উত্তরা) শূন্য হয়।
এইচএস/বিএ/এমকেএইচ