ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভেজাল পণ্যে ব্র্যান্ডের মোড়ক লাগিয়ে বিক্রি, ১৫ লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:৫১ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২০

তেল, লবণ, চাল, সেমাই ও ঘি সবই তিনি কিনে আনেন খোলা বাজার থেকে। ভেজাল ও মানহীন এসব পণ্য কিনে প্রথমে নিজের গুদামে মজুত করেন। এরপর নিজেই তৈরি করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব ব্র্যান্ডের পণ্যের লেভেল। সেই লেভেল বা মোড়কে সামি স্টোরের মালিক মো. আবুল হোসেন মূলত বিক্রি করে আসছিলেন মানহীন ভেজাল ভোগ্যপণ্য।

রাজধানীর চকবাজার থানাধীন ইসলামবাগ কাঁচাবাজারের ৪৫ নং দোকান সামি স্টোর। সেই দোকান থেকেই পাইকারি দরে এসব ভেজাল পণ্য ‌‌‘ব্র্যান্ড পণ্য’ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতেন আবুল হোসেন।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় নকল ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত, প্রক্রিয়াজাত, মজুত ও বিক্রির বিরুদ্ধে র‌্যাব-১০ এর একটি দল পুরান ঢাকায় ওই অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সামি স্টোরের মালিক মো. আবুল হোসেনকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

jagonews24

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সামি স্টোরের মালিক আবুল হোসেন বিভিন্ন জায়গা থেকে খোলা বাজারের ও ভেজাল সয়াবিন ও সরিষার তেল কিনে নিয়ে আসেন। এরপর গুদামের ড্রামে মজুত করেন। এরপর তীর, পুষ্টি, বিসমিল্লাহ, সুগন্ধাসহ নানান ব্র্যান্ডের লেভেল বা মোড়ক লাগিয়ে সরবরাহ করে আসছিলেন। তার গুদাম থেকে এরকম ১১ ব্র্যান্ডের মোড়ক পাওয়া গেছে। লেভেলে উৎপাদন তারিখ ও স্থান লিখে রাখছেন আসল তেলের বোতলের মতোই। মূলত ব্র্যান্ডের মোড়কে খোলা তেল বিক্রি করে আসছিলেন তিনি।

পলাশ বসু বলেন, চিনিগুড়া চাল দেশের একটি জনপ্রিয় চালের ব্র্যান্ডের নাম। তিনি সেটাতেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রমরমা বাণিজ্য করে আসছিলেন। সাধারণ মানের চালকে চিনিগুড়া চাল হিসেবে বিক্রি করে আসছিলেন একই কায়দায়। চিনিগুড়া চালের অসংখ্য মোড়ক তার কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া খোলাবাজারের লবণ একই কায়দায় ব্র্যান্ডিং করে বিক্রি করে আসছিলেন তিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে খোলা বাজারের লবণ কিনে এনে তার গোডাউনে রেখে তীর, ফ্রেশ, মোল্লা সল্টসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামের মোড়কে বিক্রি করতেন। নকল মোড়কেও তিনি লিখেছেন নিজের মতো করে আয়োডিনযুক্ত লবণ। অথচ লবণে আয়োডিনের পরিমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।

তিনি আরও জানান, খোলাবাজারে সেমাই, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি সেমাই কমমূল্যে কিনে এনে ব্র্যান্ডেই সেমাই হিসেবে লেভেল প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে আসছিলেন আবুল হোসেন। মানহীন ঘি কিনেও নকল ব্র্যান্ড মোড়কে বিক্রি করে আসছিলেন। শুধুমাত্র ফ্লেভার দিয়েই তিনি ঘি বিক্রি করছেন। অথচ ঘি কীভাবে তৈরি হয়, কীভাবে প্রক্রিয়াজাত ও লেভেল করতে হয়, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। নকল বা মানহীন ঘি তিনি কোথায় থেকে ক্রয় করেছেন তার কোনো রশিদও তিনি দেখাতে পারেননি।

ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, আবুল হোসেন বলতে পারেন পুরাতন পাপী। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি তার নিজস্ব গোডাউনকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘন করে মানহীন ভোগ্য পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে প্রতারণা করে আসছিলেন। এজন্য তাকে নিরাপদ খাদ্য আইন ও ভোক্তা সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন ধারায় মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার গোডাউন থেকে লেভেল তৈরি ও মোড়কজাত মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ব্র্যান্ড কোম্পানির ভোগ্যপণ্যের লেভেল জব্দ করা হয়েছে। সামি স্টোর থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ভেজাল ও মানহীন তেল, চাল, লবন, ঘি ও সেমাই জব্দ করা হয়েছে। ভোক্তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, বাজারে সঠিক লেভেল গুণগত মান নিশ্চিত হয়ে ভোগ্যপণ্য ক্রয় করুন। পাশাপাশি তিনি বিক্রেতাদের অনুরোধ করে বলেন, সঠিক ও গুণগত মানের জিনিসটি বিক্রি করুন, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযানকালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক কামরুল হাসান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/এমএসএইচ