১৮ দিনে করোনা জয় করলেন এএসআই আনোয়ারুল
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে থমকে গেছে সারা বিশ্ব। এ পরিস্থিতিতে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সদস্য করোনায় মারা গেছেন। করোনাকে জয় করে আবার কাজে ফিরছেন অনেকে।
অন্যান্য সদস্যদের মতো করোনা জয় করে কাজে ফিরেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ারুল ইসলাম। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবার-পরিজন ছেড়ে থেকেছেন হাসপাতালে। মনে সাহস রেখে ১৮ দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি।
আনোয়ারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দেশের এই সংকটকালে গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখন শরীরে করোনাভাইরাস আক্রমণ করে তা টের পায়নি। দায়িত্ব পালনের সময় পিপিই, চশমা, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব ব্যবহার করেছি। এদিকে অফিস থেকে দেয়া হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথি ঔষধ নিয়মিত খেয়েছি। কিন্তু ঠিকই করোনায় আক্রান্ত হই।
তিনি বলেন, গত ২৫ জুন রাত ২টার দিকে হঠাৎ শরীরে জ্বর আসে। সাথে সাথে আমি স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে যে ঘরে ছিলাম তা ত্যাগ করে আলাদা ঘরে চলে যাই। সকালে স্ত্রী বলে, ‘তুমি এখানে কেন?’ আমি উত্তরে বলি, ‘আমার জ্বর আসছে। এখন থেকে আমি আলাদা রুম ও বাথরুম ব্যবহার করব। তোমরা কেউ এখানে আসবে না ‘ এই দিনই অসুস্থতার কথা আমার কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।
এএসআই আনোয়ারুল বলেন, ২৭ জুন সকাল ১০টা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিই। পরের দিন বিকেলে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানায় আমার করোনা পজিটিভ এসেছে। সংবাদ পাওয়ার পর আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকি। বিষয়টি আমার স্ত্রীকে জানালে বলে, ‘তোমার পজিটিভ হবে না।’। আমি বললাম, ‘একটু আগে আমাকে ফোন করে জানানো হয়েছে।’ সম্ভবত এ রকম সংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা আমার শরীরিক খোঁজ-খবর নেন।
তিনি বলেন, আমি কি বাসায় থাকব না কি হাসপাতালে ভর্তি হবো তা জানতে চায় কর্তৃপক্ষ। এদিকে আমি স্ত্রী ও ছেলের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালে ২৯ জুন সকাল ১০টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নমুনা দিই। আমি করোনা আক্রান্ত হয়েও স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে একই সিএনজিতে রাজারবাগ যাই এবং নমুনা দিয়ে ওই সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরি। ৩০ জুন সংবাদ পাই, ওরা দুজন করোনা নেগেটিভ। সঙ্গে সঙ্গে আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত ১ জুলাই আমার জ্বর, শরীর ব্যথা, গলায় ব্যথা বেশি শুরু হয়। কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা হাসপাতালে ভর্তির জন্য আমার বাসায় একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো ব্যবস্থা করেন। প্রয়োজনী জিনিস নিয়ে রওনা দেয়ার আগে ছেলেকে বলি, ‘বাবা, আমার ১০ দিনের ডিউটি আছে। আমি ১০ দিন হাসপাতালে থাকব।’ ছেলে বলে, ‘বাবা তুমি ডিউটি করলে হাসপাতালে কেন, ওইখানে তো রোগীরা থাকে?’ আমি বলি, ‘এবার আমাকে হাসপাতালে ডিউটি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, জীবনে প্রথম রোগী হয়ে অ্যাম্বুলেন্স উঠি। পেছনে ফেলে যাচ্ছি স্ত্রী আর সন্তানকে। মনে ভয়ভীতি কাজ করছে। ডেমরা থেকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার দিয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু সময়টা বিশাল মনে হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছানো মাত্র আমাকে তেজগাঁও ইমপালস হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের দিনগুলো কেমন ছিল জানতে চাইলে আনোয়ারুল বলেন, ইমপালস হাসপাতালে সাথে সাথে আমাকে দুপুরে খাবার দেয়া হয়।এরপর হাসপাতালে ১৪ তলায় ১৪১৩ কেবিন থাকতে দেয়া হলো। অনেকে জানেন বেসরকারি ইমপালস একটি ব্যয়বহুল হাসপাতাল। শুরু হলো চিকিৎসা। আমাকে ওষুধ দেয় দেয়াে হলো। সেগুলো নিয়মিত সেবন করেছি। ওইখানে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ইউরিন টেস্ট, এক্সরে, ইসিজি করে যেন সবার রিপোর্ট ভালো আসে। এছাড়া সকালে ফজরের নামাজের পরই গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল। এটা দিনে ৪/৫ বার চলতো। পানিতে লং, এলাচ, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও আদা দিয়ে গরম করে ধোঁয়া নিতাম ৪/৫ বার। কখনো এই মসলা মিশ্রণ গরম পানি লেবু দিয়ে খেতাম। মাঝে মাঝে গ্রিন টি খেতাম। লেবু, মাল্টা, লটকন, আম, আপেল, আমলকি খেয়েছি নিয়মিত। স্বাভাবিক ভাত, মাছ ঠিম, দুধ, ডাল খেয়েছি। যখনি মনে হয়েছে কিছু না কিছু মুখে দিয়েছি। মহান আল্লাহর রহমতে হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিকতায় ভালো ছিলাম।
আনোয়ার বলেন, গত ৬ জুলাই হঠাৎ করে ইমপালস হাসপাতালে থেকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল আমাদের আনা হয়। এখানেও ওই ওষুধের সঙ্গে গরম পানি চলছিল। আক্রান্ত হওয়ার ১১তম দিন থেকে আস্তে আস্তে খাবারের গন্ধ পেতে শুরু করি। ১৩ জুলাই সকালে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিই। সন্ধার দিকে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। রাতেই ছাড়পত্র নিয়ে বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছি।
জেএ/এমএসএইচ/পিআর