ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে নগরজীবন
মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অফিস-আদালত ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আগের মতো স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিদিনই রাস্তাঘাটে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে নগরজীবন!
গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পরবর্তী দুই মাস সাধারণ ছুটি শেষে ১ জুন সীমিত পরিসরে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়া হয়। এরপরও জুন মাসে ভীতির কারণে রাস্তাঘাটে সীমিতসংখ্যক মানুষ ও যানবাহন দেখা যেত। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ঘরে বসে থাকায় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় শপিংমল ও মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশপথে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রসহ জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখে করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তারা মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, ফেসশিল্ডসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তবেই বের হচ্ছেন।
রোববার (৫ জুলাই) জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তাঘাট ও যানবাহনে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি দেখতে পান। কাকডাকা ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি বাজারে রীতিমতো মানুষের হাট বসে। সকাল ৮টার পর থেকে বিভিন্ন গার্মেন্টকর্মীসহ মার্কেটের কর্মচারীরা তাদের গন্তব্যে ছুটতে থাকেন। সবার মুখে এক কথা, করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে খেয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আয়-রোজগার না থাকলেও গত দু-তিন মাস বাসাভাড়া ও সংসার খরচ চালিয়ে নগর বাসিন্দাদের সিংহভাগেরই হাতে টাকা নেই।
রোববার, দুপুর ১২টা। রাজধানীর জিরো পয়েন্টের সামনের চৌরাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট ও দুজন কনস্টেবল যানবাহনের স্রোত সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। স্টেডিয়াম, পল্টন, গুলিস্তান এবং সচিবালয়- চারদিক থেকে অসংখ্য ছোটবড় বাস, প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্যাডেলচালিত রিকশা জমা হওয়ায় একবার একপাশে আটকে আরেক পাশে ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লম্বা লাইন পড়ছিল যানবাহনের।
কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক পুলিশ এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্ত তাদের হাত উঁচিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়নি। কিন্তু এ মাসের শুরু থেকেই রাস্তায় বিপুলসংখ্যক যানবাহন যাতায়াত করছে। দৃশ্যত এলাকার যানবাহনের চাপ অনেকটা করোনামুক্তকালীন স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়ে গেছে।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আবু হোসেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র অফিসার পদে চাকরি করেন। তিনি বলেন, দুই মাস সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকার পর গত মাসে যখন মিরপুর থেকে বাসে উঠতাম তখন যাত্রী সংখ্যা ছিল কম, বাসে উঠলেই ভয় করত। কিন্তু আজ সকাল বেলা আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠতে হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী সাহিদা বেগম জানান, সকাল বেলা বিডিআর সেকশনের সামনে দিয়ে এলিফ্যান্ট রোডের কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তাকে হেঁটে আসতে হয়। মানুষের ভিড় এবং রিকশা ঠেলে আসা যায় না বলে তিনি জানান।
করোনা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন কর্মস্থলে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সাহিদা বেগম বলেন, দুই মাস ঘরে বসা ছিলাম। রিকশাচালক স্বামীর একার আয় দিয়ে কোনোভাবে বাঁচলেও বাসাভাড়া বাকি পড়েছে। এ কারণে অনেকটা নিরূপায় হয়েই জীবিকার তাগিদে কাজে যোগদান করতে হয়েছে।
রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সজীব হোসেন জানান, ব্যবসায়ীরা সারা বছর টুকটাক ব্যবসা করলেও রমজানের ঈদের জন্য তারা অপেক্ষা করেন। এবারও অগ্রিম টাকা দিয়ে জামা-কাপড় তুলে রেখেছিলেন কিন্তু করোনার কারণে বেচাকেনা হয়নি। গত মাস থেকে দোকান খুললেও বেচাকেনা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এই মাস থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছে।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ