ছাত্রদের সার্টিফিকেট ফেলে দেয়া বাড়িওয়ালাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে সম্পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটসহ মূল্যবান মালামাল সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে তুলে দেয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের করা মামলায় এখনও বাড়ির মালিক মুজিবুল হক ওরফে কাঞ্চনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে অভিযুক্ত ওই বাড়ির মালিককে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ কুমার। শুক্রবার বিকেলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বাড়ির মালিক আসামি মুজিবুল হক পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটসহ মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আশা করি, উদ্ধার হবে।’
এদিকে একই ধরনের ঘটনায় পূর্ব-রাজাবাজার এলাকার আলিফ হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার আদালতে তোলা হলে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
জানা যায়, আলিফ হোস্টেলে ১৩০ জন শিক্ষার্থী থাকতেন।
আর পলাতক বাড়িওয়ালা মুজিবুলের মালিকানাধীন কলাবাগানের ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিটের ‘রুবি ভবনে’ আট শিক্ষার্থী ভাড়ায় থাকেন।
শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারিতে ক্যাম্পাস বন্ধ হলে বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন তাদের সার্টিফিকেট ও মালামাল ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হোস্টেল কর্তৃপক্ষ এবং বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে সজিব হাসান ও সোয়ান মিয়া বৃহস্পতিবার রাতে পৃথক দুটি মামলা করেন।
ভুক্তভোগী ঢাকা কলেজের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী সজীব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্চের ৫ তারিখে আমরা ভাড়া পরিশোধ করি। পরে করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হলে আমরা সবাই বাড়িতে চলে যাই। এর মাঝে বাড়ির মালিক আমাদের ভাড়া পরিশোধ করতে ফোন করেন। আমরা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও আনুসাঙ্গিক খরচবাবদ ১৫ হাজার টাকা বাড়ির মালিককে বিকাশে পাঠাই।’
বিকাশে টাকা পাঠানোর পর বাড়ির মালিক আর ফোন ধরেননি উল্লেখ করে সজীব আরও বলেন, ‘আমাদের বাসার মালামাল সব ফেলে দেয়া হয়েছে জানতে পেরে আমরা ঢাকায় চলে আসি। আসার পর আমাদের আর ওই বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমাদের জানানো হয়, বাসার সব মালামাল সিটি করপোরেশনের গাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছে। বাড়ির মালিককে বললাম, আমাদের জিনিসপত্র সব কোথায়? বাড়ির মালিক বলে, ‘নাই, সব ক্লিয়ার’।
গত চার বছর ধরে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন সজীব। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই মাসের ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায় বাড়ির মালিকের এমন কাণ্ড কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। সজীব বলেন, তিনিসহ আরও আট শিক্ষার্থী ওই বাসায় একই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। এর মধ্যে আইডিয়াল কলেজের সাজ্জাদ হোসেন, মো. সোহেদ, সিটি কলেজের মো. তামিম ও তেজগাঁও কলেজের মো. অলিউল্লাহ এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এই চার পরীক্ষার্থীই তাদের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র হারিয়েছেন। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে এমন দুজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। তাদের সবাই প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট, মূল্যবান জিনিসপত্র, ল্যাপটপসহ ব্যবহৃত সবকিছুই হারিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, কলাবাগানের ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিটের বাড়িতে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যদের সার্টিফিকেট ও মালামাল ফেলে দেয়ার ঘটনায় আসামিকে গ্রেফতারের অভিযান চলছে। আমরা আশা করি, শিগগিরই তাকে পেয়ে যাব। আর আলিফ ছাত্রাবাসের ঘটনায় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত তার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
নাহিদ হাসান/জেডএ/জেআইএম