মৃত্যুময় বেদনার এক দুঃসহ দিন
এমনও দিন কখনও কখনও আসে, মৃত্যুর বিভীষিকাময়, অন্তহীন বেদনার। ক্রমাগত মৃত্যুর ঢেউ দুঃসহ করে তোলে সময়। তেমনই স্বজন হারানো বুকভাঙা হাহাকারের দিন, ২৯ জুন।
এমননিতেই ইদানীংকালে করোনা মহামারি সুসংবাদকে ক্রমেই মুছে দিচ্ছে। ফিকে করে দিচ্ছে আনন্দের রং। সেই নিরানন্দের শ্রাবণে ২৯ জুন যেন বিষাদের ঝড়। সতর্ক জীবন-যাপনের ফাঁকে আজ ক্ষণিকের জন্য বিষাদের ধুলোর স্পর্শ লাগেনি ৫৬ হাজার বর্গমাইলে এমন কাউকে কী পাওয়া যাবে! দিনমান একের পর পর মৃত্যুর ঢেউ আছড়ে পড়েছে সীমিত জীবন-যাপনের পটে। বিশিষ্টজন থেকে অতি সাধারণ- কোথায় ছিল না আজ মৃত্যু!
সকালে উঠেই সরকারের মন্ত্রিসভার সর্বজ্যেষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলক হকের করোনা আক্রান্ত স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু মৃত্যুর খবর আসে। সকাল পৌঁনে ৮টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এর মধ্যেই মৃত্যু আরও বড় আয়োজন করে বসেছিল সদরঘাটে। সকাল ৯টার কিছু পরে সেখানে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় কমপক্ষে ৫০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটের মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্বজনদের নোনাজলের ভার আজ বুড়িগঙ্গার প্রকৃতিকেও কী অস্বস্তিতে ফেলেনি! টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে চোখ রাখলেই আহাজারি আর লাশের ছবি।
এর মধ্যেই আসে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরীর মারা যাওয়ার খবর।
বিকেলে মারা যান গেদু চাচা খ্যাত কলামিস্ট ও সাংবাদিক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য খোন্দকার মোজাম্মেল হক। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসায় মারা যান দৈনিক ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রেহানা আক্তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
আর করোনায় নিয়মিত মৃত্যুর ফিরিস্তি তো দিলামই না। যদিও এক দিনে রেকর্ড ৪ হাজার ১৪ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর দুপুরে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সঙ্গে জানিয়েছে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৮৩ জন।
আরএমএম/জেডএ