ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনায় কাজের জন্য সচিবালয়ই মন্ত্রীর একমাত্র অফিস নয় : জাহিদ মালেক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৮:৫৫ পিএম, ২৫ জুন ২০২০

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে করোনার এই দুঃসময়ে কাজ করতে কেবল সচিবালয়ে এসে বসে থাকাই মন্ত্রীর একমাত্র কাজ নয়। বরং দেশের কোন হাসপাতালে কী কাজ হচ্ছে, মানুষ হাসপাতাল থেকে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছে কি না, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, এগুলো দেখভাল করে ও খোঁজ নিয়ে যথার্থ উদ্যোগ নেয়াটাই এখন আসল কাজ।’

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে আজ একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না’ শিরোনামে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘পরিবেশিত সংবাদটি মিথ্যা ও জনমনে উস্কানিমূলক’।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না, এই শিরোনামেই গলদ রয়েছে।’

মূলত পত্রিকাটিতে বলা হয়, ‘গত ২৫ মে ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের ছুটির পর থেকেই মন্ত্রণালয়ে অনিয়মিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী’। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, প্রকৃত ঘটনাটি হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা গত ২৭ মে থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত হোম কোয়ারেইন্টাইনে ছিলেন। তার পূর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব করোনায় আক্রান্ত থাকাকালে আরেক দফা ১৪ দিনের হোম আইসোলেশনে থাকতে হয়েছিল মন্ত্রীকে। তারপর স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আলী নূর সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নানের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদও করোনায় আক্রান্ত হন। সচিবালয়ে বর্তমানে মন্ত্রীর দফতরে তিন জনসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব, সহকারী সচিব থেকে অন্যান্য কর্মচারীসহ ৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন। এরকম অবস্থায় নিয়মিত অফিসে আসার বিপরীতে অনলাইনে নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাওয়াটাও কম জরুরি নয়।

তিনি জানান, উল্লেখিত কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকায় দুবার মন্ত্রীকে কেবিনেট সভায় যোগদান না করার পরামর্শ দেন কেবিনেট সেক্রেটারি। এমনকি একবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এক সভা থেকে সভা না করেই চলে আসতে হয়েছিল। সরকারি ছুটিকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব, মহাপরিচালকসহ সব স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কর্মচারী কোনো ধরনের ছুটি ভোগ না করে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। যেহেতু আক্রান্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা, সচিব, একান্ত সচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সন্নিকটেই অবস্থান করেন সেজন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ১ জুন থেকে বাসায় হোম আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে। অথচ পত্রিকাটিতে হোম আইসোলেশনে থাকার সময়টি ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিস করেন না’ শিরোনাম করে তুলে ধরা হয়েছে।

জাহিদ মালেক জানান, হোম আইসোলেশনে থাকা অবস্থায়ই তিনি দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখিত সংবাদের প্রতিবেদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, ‘যদি নিষ্ক্রিয়ই থাকতাম তাহলে কীভাবে মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব থেকে ৬৬টি ল্যাবে পরিণত হলো। মাত্র ১০০ করোনা পরীক্ষা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ থেকে ১৯ হাজারে উত্তীর্ণ হলো। তাহলে কীভাবে মাত্র ১৫ দিন সময়ে বসুন্ধরায় ২ হাজার বেড, উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেট ও উত্তরার দিয়া বাড়িতে মোট প্রায় ৩ হাজার বেড, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, শিকদার মেডিকেলের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু হলো? সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা দেয়া বাধ্যতামূলক হলো। পাশাপাশি শুধু ঢাকায় থাকা কিছু আইসিইউ সুবিধাকে কীভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হলো? মাত্র ১০ দিনে ২ হাজার নতুন চিকিৎসক ও প্রায় ৬ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ হলো?’

অন্যদিকে, অন্তত ৭০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ, মেডিকেল কলেজে অনলাইনে পড়ালেখা করা, অনলাইনেই পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু করা, সব হাসপাতালে খালি বেড, চিকিৎসক, নার্স সংখ্যার আপডেট তালিকা প্রকাশিত অবস্থায় দৃষ্টিগোচর করার কাজও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাহিদ মালেক আরও জানান, এত কিছুর পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে মেনে চলছেন। কোনো একটি সরকারি ফাইল একদিনের জন্যও পেন্ডিং অবস্থায় রাখেননি। প্রতিদিনের সরকারি কর্মকাণ্ড প্রতিদিনই সমাপ্ত করেছেন। অথচ পত্রিকায় প্রকাশিত আজকের এ ধরনের সংবাদের মাধ্যমে জনমনে সবসময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বিবৃতিতে জানিয়েছেন।

এমইউ/এফআর/জেআইএম