গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে সাক্ষাতে ওষুধ প্রশাসনের ‘অনীহা’
জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা বিশ্বেই দ্রুত সম্ভাবনাময় ওষুধ বা পরীক্ষা পদ্ধতির অনুমোদন দেয়া হয়। দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট করোনা পরীক্ষায় একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তবে উদ্ভাবনের পর তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিট নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা। শুধু তাই নয়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের অ্যান্টিজেন্ট অংশের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এটার ফলাফল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে জমা দিয়েছে গত ১৬ জুন। এরপর ৯ দিন পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের অনুমোদন দিচ্ছে না ওষুধ প্রশাসন। শুধুই তাই নয়, এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে পরিচালক পর্যায়ের কেউ সাক্ষাৎ করছেন না।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক আলোচনা সভায় এমন অভিযোগ করেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল (উপাধ্যক্ষ) এবং কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।
তিনি বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসনের কাছে বিএসএমএমইউ গত ১৬ জুন কিটের কার্যকারিতার সুপারিশমালা জমা দিয়েছে। আজ ২৫ জুন পেরিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ৯ দিন পার হয়েছে। কিন্তু তারা কিছু বলছে না। আমি গত তিন দিন ধরে মহাপরিচালক থেকে শুরু করে পরিচালক পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট (সাক্ষাতের সময় চেয়ে অনুমতি) নেয়ার চেষ্টা করছি। আমি সফল হইনি। সম্প্রতি ওষুধ প্রশাসন নিচতলার সিঁড়ির সঙ্গে বিশাল বড় একটা গেট দিয়েছে। ওটা টপকানো এখন খুব…। আর আমি যখন গণস্বাস্থ্যের পরিচয় দিয়েছি, স্বাভাবিকভাবে তাদের পাওয়াই যায়নি। সবার সঙ্গে ই-মেইলে অ্যাপয়েনমেন্ট চেয়েছি। টেলিফোন করেছি, ধরেন না। সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমেও ফোন করিয়েছি, ধরেন না। তারা কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে মনে হচ্ছে।’
তবে বুধবার (২৪ জুন) সকালে একজন সহকারী পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান মুহিব উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, ‘সহকারী পরিচালক বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হচ্ছে। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। আজকে আমাদের একজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিলেন। তারা বলেছেন যে, আজকে তো সিদ্ধান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী সপ্তাহে হয়তোবা একটা কিছু জানতে পারব।’
মুহিব উল্লাহ খোন্দকার আরও বলেন, ‘আমরা তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, আপনারা মূল্যায়নের উপরে মূল্যায়ন করছেন নাকি। মূল্যায়ন তো ইতোমধ্যে হয়েছে। আমরা ওটাই এগ্রি (একমত)। আমাদের এই কিটকে আরও উন্নত করার জন্য বিএসএমএমইউ থেকে কিছু সুপারিশ ছিল। সেজন্য আমরা বলেছি, আমাদের কিছু রি-এজেন্ট আমদানির নো-অবজেকশন দেন। সেটাও আমরা আজ সকালে তাদের কাছে পাঠিয়েছি।’
অ্যান্টিবডি কিটের ফলাফল দিলেও লালা সংগ্রহে জটিলতা থাকায় গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিজেন্ট কিটের পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে বিএসএমএমইউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, ‘অ্যান্টিজেন্ট কিটের বিষয়ে আমরা বিএসএমএমইউর সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে আছি। স্যালাভেরা (লালা) সংগ্রহের যে ডিভাইসের জন্য আমরা স্থগিত রেখেছিলাম, সেটা আমরা বিএসএমএমইউকে দিয়েছি। ওনাদের সঙ্গে আমাদের কিছু কারিগরি আলাপ চলছে। আমাদের এক্সপার্ট টিম গিয়েছিলাম। আমরা কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। মূল যে টেকনিক্যাল প্রটোকল ছিল, সেটার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। ওনারা সেটা শেষ করেছেন। গতকালও আমরা ওনাদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা আশা করছি, তারা আগামী সপ্তাহ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে। আগে ওনাদের ধারণা ছিল যে, ৫০০ নমুনা করতে হবে। এখন আমরা আশা করছি, সেটা আরও কমে আসবে।’
পিডি/এফআর/জেআইএম