আতঙ্কের মধ্যেও হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল
রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালানে বোমা হামলার পর আতঙ্কের মধ্যেও একটি তাজিয়া মিছিল বের হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিছিলটি বের হয়। জানা যায়, জোহরের নামাজের পর আরও একটি মিছিল বের হবে।
গতরাতে মহররম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের হওয়ার সময় রাজধানীর হোসনি দালানের মূল ফটকের ভেতরে ৩টি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সানজু নামে একজন মারা যায়, আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
মুসলমানদের ত্যাগ ও শোকের মাস মহররম। মহররম হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। ১০ মহররম কারবালায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর দিনটিতে সারাবিশ্বে মুসলমানরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। এ উপলক্ষে রাজধানীতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
তবে শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মিছিল হোসনি দালানের মূল ফটকের ভেতর থেকে মিছিল বের হওয়ার সময় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই বিস্ফোরণে আহত অন্তত ৬৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আব্দুল কাদের জিলানী নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মুহররম মাসের প্রথম দশদিন শোক স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করেন মুসলমানরা। আশুরার দিনে তাজিয়া মিছিল বের করার প্রস্তুতি কালেই বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় শোক নেমেছে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদের মধ্যে।
হোসনি দালানের তত্ত্বাবধায়ক মির্জা এমদাদ আলী বলেন, মূলত ইমাম হোসেন (রা.) এর সমাধির প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল হয়। এবার মোট তিনটি বড় মিছিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রাতের মিছিলটি স্থগিত করা হয়। তবে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় একটা মিছিল বের হয়েছে। জোহরের নামাজের পর আরেকটি মিছিল বের হবে, চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুরা উপলক্ষে পুরান ঢাকার হোসনি দালান থেকে শুরু হয়েছে বড় তাজিয়া মিছিল। মিছিলটি বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট এবং ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়ক পার হয়ে ধানমণ্ডি লেক এর অস্থায়ী `কারবালা` প্রাঙ্গনে এসে শেষ হবে। এছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার, লালবাগ, পল্টন, মগবাজার থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়েছে।
তাজিয়া মিছিলের পুরোটি সাজানো হয় কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি নিয়ে। মিছিলের মূল দায়িত্বে রয়েছে হোসাইনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সাকির নামে এর এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, মিছিল বের হওয়ার আগেই যারা বোমা হামলা করেছে তারা মুসলমান না, মোনাফেক। তাদের এ রকম ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমরা ধিক্কার জানাই।
মিছিলে অনেক মানুষকে অংশ নিতে দেখা গেছে। দেখা যায় ‘হায় হোসেন হায় হোসেন’ বলে শোকের মাতম চলছে। চলছে কারবালার দৃশ্যায়ন। মিছিলে অংশ নেয়া অনেক যুবক বুক চাপড়ে, জিঞ্জির দিয়ে শরীরে আঘাত করে মাতম করছেন।
এ ছাড়াও মিছিলের অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন নিশান বহন করে চলেছেন। মিছিলে দুটি ঘোড়া আনা হয়েছে। জানা গেছে, দুধ দিয়ে এ দুটি ঘোড়াকে গোসল করানো হয়েছে রাতে। ইমাম হোসেন (রা.) যখন কারবালায় যান তখন ঘোড়া ছিল এক রকম, যুদ্ধ শেষে রক্তে ভেজা ছিল ঘোড়া; তারই স্মরণে রক্ত রং দিয়ে ঘোড়াকে সাজানো হয়েছে।
হোসনি দালানের তত্ত্বাবধায়ক এম এ ফিরোজ বলেন, তাজিয়া মিছিলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। কিন্তু গতরাতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কারবালার শোকের সাথে আরও শোক নেমেছে। আমরা এরপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে মিছিল শুরু করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে মাতম চলবে। আবারো যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চান তিনি।
জেইউ/এসআইএস/আরআইপি