বেকার তরুণ-যুবকদের জন্য ভাতা চালুর পরামর্শ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের
করোনা প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষিত বেকার তরুণ ও যুবকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ভাতা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ ও নীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
শুক্রবার (১৯ জুন) যুব সংসদের বাজেট অধিবেশন-২০২০ এ এই প্রস্তাব করেন তিনি। ভার্চুয়াল এ অধিবেশনের আয়োজন করে ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।
এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর প্রমুখ।
অর্থনীতিবিদ ও নীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেক শিক্ষিত তরুণ ও যুবক বেকার হয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। অনেকে কর্ম হারিয়ে বিদেশ থেকে ফেতর আসছেন। আবার কেউ ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসানে পড়েছেন। এসব যুবকের বিষয়ে এখনই চিন্তা করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, চলমান সংকটের কারণে বেকার হয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে অনেক যুবক, যারা প্রথাগত গরিব ছিল না। অনেকে টিউশনির টাকা দিয়ে ঢাকায় থাকত, পড়ালেখার খরচ চালাত। এখন টিউশনি নেই, সে বেকার। মেসের বিল দিতে পারছে না। থাকা-খাওয়ার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক প্রবাসী যুবক মধ্যপ্রাচ্যে বেকার হয়ে গেছে, যাদের টাকায় দেশে সংসার চলতো, ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ চলতো। তার হয়তো কোনো পুঁজি নেই। এখন তারা বেকার, অনেকে দেশে এসেছেন। আবার অনেকে অপেক্ষায় আছেন প্লেন চালু হলে দেশে আসবেন। তারা দেশে এসে কী করবেন, এ বিষয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এ ছাড়া অনেকে স্বল্প ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল, কিন্তু চলমান সংকটে তাদের ব্যবসা নেই, লোকসানে পড়েছেন। কিন্তু তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে; এখন তারা কী করবে? এই তরুণ-যুবক উদ্যোক্তাদের বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
দেবপ্রিয় বলেন, এখন বলা হচ্ছে বাজেটে তাদের জন্য দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হ্যাঁ আমিও বলব, বাজেটে দিক নির্দেশনা আছে। বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য। সেখানে বলা হয়েছে, কারা এ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এর মধ্যে গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
কিন্তু আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক তরুণ ও বেকার শিক্ষিত যুবক জানেন না এই সব সুবিধার কথা। এসব বিষয়ে আমাদের যুবকদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। তারা ততটা সজাগ নয়। আবার যারা সুবিধা সম্পর্কে জানেন তারা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে সুবিধার সুফল নিতে পারেন না। কারণ, একটা ব্যাংকে যখন লোনের জন্য তরুণ উদ্যোক্তা আবেদন করে তখন ব্যাংক তার ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চায়। তার লেনদেন ইতিহাস জানতে চায়। কিন্তু এ ধরনের কোনো একটিভিটি তাদের বেশিরভাগের থাকে না। তাই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
সরকারের নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তরুণ ও যুবক উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বা রাখা হবে তা সহজ করতে হবে। অর্থাৎ তাদের জন্য সুবিধা রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকার যে সুবিধাগুলো দিয়েছে তা যেন কার্যকর ব্যবহার হয়, সেদিকে না এখন মনোযোগ দিতে হবে।
নীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় বলেন, যুবকদের চাকরি নয় তাদের কর্ম বাজারের তথ্য দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষিত যুবকদের জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা জরুরি। যাতে করে স্ব ইচ্ছায় শিক্ষিত যুবকরা নিবন্ধন করতে পারেন। পাশাপাশি তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ভাতা চালু করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, করোনায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করবে। এতে করে অনেক শিক্ষিত যুবক বেকার হয়ে যাবে। তাই সরকারের উচিত আর্থিক প্রণোদনা বা সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাই যেন না করে এমন শর্ত জুড়ে দেয়া।
প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ বর্ধিত শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের শুল্ক ১০ শতাংশ ছিল; এটা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা গেলে বেশি ভালো হতো। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে আগের ন্যায় অন্তত ১০ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করছি। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে আমরা বলেছি। পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে দাফতরিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে লিখিত প্রস্তাব দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অর্থমন্ত্রী আমাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন।
তরুণদের উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে আইসিটি সেবা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ছয় লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সার আছে। এক কোটি প্রবাসী তরুণ ও যুবক রয়েছেন, যারা ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যে অর্থে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রয়েছে। ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক ৩০ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে সহযোগিতা করছে।
'তিন কোটি মানুষ কৃষি শ্রমের সঙ্গে জড়িত। বর্তমান সরকার কৃষিতে জোর দিয়েছে। কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে শিক্ষিত যুবকদের এ খাতে এগিয়ে আসতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগামীতে ৬৪ জেলায় শেখ কামাল আইটি সেন্টার স্থাপন করা হবে,'-বলেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে প্রথমবারের মতো বাজেট নিয়ে আয়োজিত যুব সংসদের আলোচনায় ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতের সহজীকরণের জন্য করোনা পরবর্তী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য বাজেট প্রত্যাবর্তন, যুব নেতৃত্ব ও শিল্পোদ্যোক্তাকে জাগরিত ও বিকশিত করা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তালমিলিয়ে চলার জন্য জাতীয় যুবনীতির বাস্তবায়নে বাজেট প্রত্যাবর্তন। যুব কাউন্সিলর গঠন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও করোনা পরবর্তী এসডিজি-২০৩০ অর্জনের লক্ষে বাজেট প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে যুব সংসদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান। এছাড়া স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধ্রুবতারা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অমিয় প্রাপণ চক্রবর্তী।
এসআই/জেডএ/পিআর