ঢামেক হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি-পেরেশানি
রাজধানীতে মহররম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের হওয়ার সময় শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে নিখোঁজ ও আহতদের স্বজনদের আহাজারি। মহররমের শোকের মিছিলকে ছাপিয়ে গেছে স্বজনদের আহাজারি।
স্বজনরা চিৎকার করে বলছেন কারো হাত গেছে, কারো আঙ্গুল। আহতদের ছবি নিয়ে স্বজনদের চলছে দৌড়া-দৌড়ি আর পেরেশানি।
মুনছুর নামে একজন জানান, তার তিন ছেলে মিছিলে অংশ নিতে রাতেই হোসনি দালানে যায়। কিন্ত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর এক ছেলের দেখা মিললেও অপর দুই ছেলে দেখা পাননি তিনি। তাদের মোবাইলফোনেও কল দিয়েও ফোন বন্ধ পাচ্ছেন।
আসলাম নামে অপর এক স্বজন বলেন, তার বোন এসেছিলেন মিছিলে। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তার বোনের মাথার অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়েছে গেছে। কোলে তুলে রিকশাযোগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
অপর এক স্বজন জানান, তার দুই ভাই ঘটনার পর এখনো নিখোঁজ। আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে কিনা তা জানতে ছবিসহ তিনি হাসপাতালে ছুটে এসেছেন।
ঢামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৫৭ জন আহত ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আপাতত আশঙ্কামুক্ত হলেও প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের রক্তদানের অনুরোধ জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর সাংবাদিকদের জানান, যে পরিমাণ ডাক্তার ও নার্স হাসপাতালে রয়েছে তাতে তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না। সে কারণে অতিরিক্ত নার্স ও চিকিৎসকদের ডেকে নেয়া হয়েছে। এখন আহতদের নিবিড় চিকিৎসা চলছে। তবে প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী এক সংগঠক সাংবাদিকদের জানান, এখানে এবি পজেটিভ, এ পজেটিভ এবং ও নেগেটিভ রক্তের বেশি প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত ১৫ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করে দেয়া হয়েছে। আরো বেশ কয়েকজন রক্ত দেয়ার জন্য এসেছেন। কমপক্ষে ৩০ ব্যাগ রক্ত লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত ডাক্তারগণ।
সজল নামে এক স্বেচ্ছায় রক্তদাতা জানান, আমি উত্তরা থেকে এসেছি। এবারই প্রথম রক্ত দেব। টিভি ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন জেনেই রক্ত দিতে ছুটে এসেছি।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত আড়াইটার দিকে হোসনি দালানের মূল ফটকের ভেতর থেকে মিছিল বের হওয়ার সময় এ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সানজুম (২৮) এক যুবক নিহত হয়েছেন। কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
তাদের সবাইকে ঢামেক হাসপাতাল, মিডফোর্ড হাসপাতালসহ স্থানীয় বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৫৭ জন আহত ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ।
জেইউ/এসএইচএস