দেশ ছাড়তে পারবে না এমপি পাপুলের পরিবারের কেউ
অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর আরও অনুসন্ধানের স্বার্থে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে সপরিবারে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যদিও একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এ এমপি বর্তমানে দেশে নেই। মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে গত ৭ জুন তাকে কুয়েতে গ্রেফতার করা হয়। কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে নেয়া হয়েছে রিমান্ডেও। তবে পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিন যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য বুধবার (১৭ জুন) ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দিয়েছে দুদক।
এ সংক্রান্ত দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, পাপুল দেশে আসলে যেন বিদেশ যেতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি বিদেশে অবস্থান করে তাহলে সে বিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো চিঠিতে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানিয়েছে দেশের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
তবে ইমিগ্রেশন পুলিশের এসপি (পুলিশ সুপার) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবারসহ সংসদ সদস্য পাপুলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদকের কোনো চিঠি ইমিগ্রেশন পুলিশ এখনও পায়নি। চিঠি পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তবে পাপুল এখনও দেশে ফেরেনি বলে নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা।
সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য (পরিচালক) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। দুদকের কাছে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার তথ্য থাকায় এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাপুলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পাপুলকে আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কুয়েতি গণমাধ্যমের খবর, ‘মানব ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত থাকা কয়েকশ ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সে তালিকায় গ্রেফতার করা হয়েছে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য পাপুলকে।’
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের এ পরিচালকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহককে লোন বরাদ্দ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার এবং শত শত কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানাধীন।
পাপুল কুয়েতে গ্রেফতারের পর গত ৯ জুন বাংলাদেশে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের পাঠানো চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর, আয়কর রিটার্নসহ ব্যক্তিগত সব নথিপত্র তলব করা হয়। কিছু নথি দুদকে পৌঁছলেও বেশকিছু অত্যাবশ্যক নথিপত্র পায়নি সংস্থাটি। সেজন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।
জেইউ/এফআর/এমকেএইচ