মা-তো বেঁচে নেই, করোনা রিপোর্ট দিয়ে কী হবে?
মোহাম্মদ নাঈম ইসলাম, ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারসহ থাকেন রাজধানীর টঙ্গী এলাকায়। মা-বাবা, তিন ভাই আর এক বোনকে নিয়ে সুখের সংসার। সংসারে টুকটাক অভাব থাকলেও সুখের কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
পৃথিবীর সবচেয়ে আপন যে মা, সেই মা-ই করোনার উপসর্গ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছোট ভাইসহ নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে।
এই শিক্ষার্থীর দুঃখ অন্য জায়গায়। করোনার উপসর্গ নিয়ে মা মারা গেলেও ঠিক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি-না, তা নিশ্চিত হতে পারেননি এই শিক্ষার্থী ও তার পরিবার।
মোহাম্মদ নাঈম ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, মায়ের শরীরে প্রথমে জ্বর আসে, পরে আবার সেরেও যায়। সর্বশেষ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে গত ১ জুন টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে দেন। হাসপাতাল থেকে বলা হয়, করোনা পজিটিভ আসলে মোবাইলে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। নেগেটিভ আসলে জানানো হবে না ৷ এরই মধ্যে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ৩ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মা ৷
মায়ের মৃত্যুর পর বাবা, বোন ও ভাইদের নিয়ে চলে যান নিজ জেলা দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন সম্পন্ন হয় মায়ের। ৪ জুন পরিবারের বাকি সবার করোনার নমুনা জমা দেন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
গত ১০ জুন অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ছোট ভাইসহ নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর থেকে স্থানীয় নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। বর্তমানে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানান মোহাম্মদ নাঈম ইসলাম।
মায়ের করোনা পজিটিভ ছিল কি-না, জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত ১২ দিন আগে মায়ের নমুনা জমা দিলেও রিপোর্ট এখনও পাইনি। মা-তো আর বেঁচে নেই, করোনা রিপোর্ট দিয়ে কী হবে?’
নাহিদ হাসান/এমএআর/এমকেএইচ