ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

কঠোরভাবে লকডাউন চলছে পূর্ব রাজাবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ১০ জুন ২০২০

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন করা হয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

চিরচেনা যে পূর্ব রাজাবাজারে সবসময় রিকশার জট লেগে থাকত, মানুষের উপস্থিতিতে রমরমা হয়ে থাকে পুরো এলাকা, সেই এলাকা লকডাউনের কারণে অনেকটাই নীরব। নেই মানুষের কোলাহল, যানবাহনের ছুটে চলা।

পূর্ব রাজাবাজারের আটটি প্রবেশপথের মধ্যে শুধু আইবিএ হোস্টেলের পাশেরটি খোলা রয়েছে। কিন্তু সেই গেট দিয়েও সাধারণ মানুষকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এই এলাকায় প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন কাউন্সিলরের নির্দেশে।

এর আগে সোমবার (৮ জুন) ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলার লক্ষ্যে ডিএনসিসি এলাকার জন্য গঠিত কমিটির এক অনলাইন সভায় পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বের হতেও দেয়া হচ্ছে না।’

তিনি জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার কর্মহীন, অসহায় ও দুস্থ মানুষের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের ডিএনসিসি থেকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হবে। এছাড়া অন্যরা অনলাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন। প্রশিক্ষিতরা বাসায় সেসব নিত্যপণ্য পৌঁছে দেবেন।

লকডাউন গাইডলাইন অনুযায়ী, যে এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হবে ওই এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবেন না এবং কেউ প্রবেশও করতে পারবেন না। সাধারণ যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সবকিছু হবে নিয়ন্ত্রিত।

গত সোমবারের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পূর্ব রাজাবাজার এলাকার নাজনিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), এটুআই, ই-কমার্স অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে।

সভা সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকার অসুস্থ রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালু করা হবে। এছাড়া পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় অবস্থিত নাজনিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হবে। এটি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বুথটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।

পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন এলাকায় বসবাসরতদের জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরগুলোর মধ্যে রয়েছে: ত্রাণের জন্য-৩৩৩; ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান : ০১৯১১-৩৮০৬৩৩; আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন : ০১৭১৫-৪০৭১৩৯; ওসি শেরেবাংলা নগর থানা : ০১৭১৩-৩৯৮৩৩৫; ব্র্যাকের প্রতিনিধি ডা. ফারহানা : ০১৭১৩-০৯৫২৭৯; আইইডিসিআর প্রতিনিধি ডা. ফারজানা ০১৭১৯-২১২৫৯১; মাসুদ হোসেন পি এ টু ওয়ার্ড কাউন্সিলর : ০১৭১১-৯৩৯৭৯৬।

লকডাউন এলাকায় যেসব নিয়ম মানতে হবে, সে সবের মধ্য রয়েছে-

>> পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় একটি মাত্র প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ (গ্রিন রোডে আইবিএ হোস্টেলের পাশে) খোলা থাকবে।

>> লকডাউন চলাকালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

>> জনগণের চলাচল অত্যন্ত সীমিত রাখা হবে।

>> লকডাউন এলাকায় বসবাসরতরা তাদের প্রয়োজনীয় নিত্যখাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করতে পারবেন। যা বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। এটুআই ও ইক্যাব যৌথভাবে এটি পরিচালনা করবে। হোম ডেলিভারির জন্য ইতোমধ্যে একদল প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী তৈরি করা হয়েছে।

>> যাদের অনলাইন সুবিধা নেই, নগদ অর্থে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করতে চান তাদের জন্য দু-একটি শাকসবজি, মাছ, মাংসের ভ্যান, ভ্যানচালক ও পণ্যসামগ্রী সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।

>> লকডাউন চলাকালে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় বসবাসরত লোকজন বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাইরের লোকজন ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না।

>> পূর্ব রাজাবাজার এলাকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে লকডাউনের বিষয়ে থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

>> লকডাউন যথাযথভাবে পালিত হওয়ার লক্ষ্যে ওই এলাকায় পুলিশের টহল থাকবে। এছাড়া মোবাইল কোর্টও পরিচালিত হবে।

>> গুরুতর রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে। এছাড়া জরুরি সেবা যেমন-বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা লকডাউন এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন।

>> ডিএনসিসির বিশেষ পরিচ্ছন্নতা টিম সেখানে কাজ করবে। তবে ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রী বা মেডিকেল বর্জ্য যেমন-মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি আলাদাভাবে প্যাকেট করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাছে দিতে হবে। মেডিকেল বর্জ্য কোনোভাবেই অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে মেশানো যাবে না।

এএস/এসআর/পিআর