নারীর কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে সহায়তা দিতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী নারীরা আর্থিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। নারীরা চাকরি হারাচ্ছেন এবং নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান নেমে গেছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এ সংকটকালে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মজীবী নারী, নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
মঙ্গলবার ( ৯ মে) সচিবালয় থেকে ইউএন ওমেনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাথে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নয়টি দেশের নারী বিষয়ক মন্ত্রীদের সাথে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ অনুরোধ জানান।
কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন ইউএন ওমেনের ( জাতিসংঘ লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতাবিষয়ক সংস্থা) ব্যাংকক আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরী।
“টুওয়ার্ডস জেন্ডার রেস্পনসিভ কোভিড-১৯ রিকোভারি : এক্সপিরেয়েন্স ফ্রম এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক” বিষয়ক এই ভার্চুয়াল সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন ওমেনের নির্বাহী পরিচালক আনিতা ভাটিয়া।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন তার ৭০ ভাগ নারী। বিশ্ব যখন মহাসংকটে তখন নারীরা ঘরে বসে নেই। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় উচ্চপদে নারীর দক্ষতা ও বলিষ্ট নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে করোনা সংকটে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক সহায়তা, ঘরে বসে কাজ করা ও সরকারি-বেসরকারি সব নাগরিক সুবিধা পাওয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করে কোভিড-১৯ সংক্রামক ব্যাধিকে চিরতরে পৃথিবী থেকে দূর করতে হবে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। সম্প্রতি ১০ হাজার ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয় সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। স্থবির হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ কোটি টাকার বেশি ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রফতানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, দুই হাজার কোটি টাকার নতুন কর্মসৃজন, যা থেকে নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবে।
'এ ছাড়া প্রান্তিক আয়ের মানুষের জন্য দুই হাজার পাঁচশ কোটি টাকার বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, ১২শ কোটি টাকার নগদ অর্থ বিতরণ, গৃহ নির্মাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রণোদনা প্যাকেজ, যার বেশিরভাগ উপকারভোগী নারী।'
ইউএন ওমেনের ব্যাংকক আঞ্চলিক অফিস আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সভায় বিভিন্ন দেশের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী, সচিব এবং নারী উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় জাতিসংঘের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন ওমেনের নির্বাহী পরিচালক আনিতা ভাটিয়া বলেন, মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি নারী। নারী উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কোভিড ১৯ মোকাবিলায় নারীকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিকল্প নেই। সভায় অংশগ্রহণকারী মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা তাদের দেশের নারী উন্নয়নের চিত্র ও কোভিড ১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।
এমইউএইচ/জেডএ/জেআইএম