কাজী পাপুলকে কনস্যুলার অ্যাকসেস দেয়া হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কুয়েতে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে ‘কনস্যুলার অ্যাকসেস’ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তবে এর আগে তাকে আটকের বিষয়ে কুয়েতের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চায় বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো দেশে সমস্যায় পড়লে তাকে আমরা কনস্যুলার সার্ভিস (দেশের নাগরিক হিসেবে সব ধরনের সেবা) দিয়ে থাকি।’
‘উনিও (কাজী পাপুল) এ দেশের নাগরিক। তিনি চাইলে আমরা এই সুবিধা দেব। তবে এর আগ তিনি আটক হয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। আমাদের দূতাবাস এটা নিয়ে কাজ করছে,’ বলেন ড. মোমেন।
তবে পাপুলকে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের তৃতীয় দিনেও এ বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, কুয়েতে আমাদের রাষ্ট্রদূত আমাকে জানিয়েছেন যে, ‘তিনি শুনেছেন মানি লন্ডারিং এবং মানবপাচারের অপরাধে আমাদের একজন সংসদ সদস্য শহীদ ইসলামকে কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনের লোকেরা অ্যারেস্ট করেছেন।’ তবে কাতার কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে অফিশিয়ালি আমাদের কিছু জানায়নি। তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, ‘কুয়েতের দুর্ঘটনাটি (এমপি পাপুলের আটক) এমন সময়ে হয়েছে যখন লিবিয়ায় পাচার হওয়া ২৬ জন বাংলাদেশি নির্মমভাবে নিহত হওয়ায় সারা পৃথিবী পাচারকারীদের ওপর খুব অসন্তুষ্ট।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের অপরাধীদের শাস্তি হয় না বলে পাচার বন্ধ হচ্ছে না।। আমরা চাই পাচারকারীরা শাস্তি পাক। কঠিন শাস্তি হলেই কেবল পাচার বন্ধ হওয়া সম্ভব।’
জানা যায়, এমপি পাপুল গত মার্চ থেকে কুয়েতে অবস্থান করছিলেন।
একজন সংসদ সদস্যের এত লম্বা সময় বিদেশে অবস্থান করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখন একটা অস্বাভাবিক অবস্থা (বিরাজ করছে)। তাছাড়া এখন জাতীয় সংসদের কোনো সেশনও নেই। সম্প্রতি একটি সেশন থাকলেও কোরাম পূর্ণ হওয়ার পরে অন্যদের উপস্থিত থাকার বিষয়ে চাপ ছিল না।’
উল্লেখ্য, শহিদ ইসলাম পাপুল লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, যিনি নিজেও একজন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। তিনি দাবি করেছেন, কাজী পাপুলকে আটক করা হয়নি।
এদিকে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাংসদ শহিদ ইসলামের বিষয়ে জানতে কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। তবে সোমবার (৮ জুন) বিকেল পর্যন্ত সে চিঠির জবাব পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশটির অফিস-আদালত পুরোপুরি খোলেনি। স্বল্প পরিসরে যা খোলা হয় তা বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য জবাব পেতে দেরি হতে পারে।’
তবে কুয়েতের গণমাধ্যম এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন দেশটির ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট আটক করে কাজী পাপুলকে আদালতে উপস্থাপন করে। আদালত তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রোববার (৭ জুন) মুশরিফ অঞ্চলের বিচারক সাংসদ পাপুলের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটর। কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের একটি সংবাদপত্রে বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সংসদ সদস্য শহীদ ইসলামের নাম আলোচনায় আসে। সে সময় এটিকে ‘ভুয়া সংবাদ’ আখ্যা দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
পাঁচ বাংলাদেশির সাক্ষ্য
কুয়েতের গণমাধ্যম দৈনিক টাইমস জানায়, সংসদ সদস্য কাজী পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের আদালতে পাঁচজন বাংলাদেশি সাক্ষ্য দিয়েছেন। যাদের সকলকেই কুয়েতে পাচার করেছিলেন কাজী পাপুল। কুয়েতের আদালতকে তারা জানান, কুয়েতে পাঠানোর জন্য তারা এই এমপিকে তিন হাজার কুয়েতি দিনার দিয়েছেন। এমনকি প্রতিবছর কুয়েতে তাদের অবস্থান নবায়ন করতেও আসামিকে অর্থ দিয়ে থাকতেন তারা।
এর আগে রোববার ড. মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি শহিদ কুয়েতে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান যিনি কুয়েতের নাগরিক, তিনি এমপিকে জামিনে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করছেন।
জেপি/এসআর/পিআর