আকাশপথে যাত্রী বাড়ছে, ‘অবিক্রিত’ কেবল বিমান বাংলাদেশের টিকেট
দীর্ঘ ৬৯ দিন পর খুলে দেয়া হয় দেশের অভ্যন্তরীণ ৪ রুটের আকাশপথ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ১ জুন থেকে ফ্লাইট চালানো শুরু করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার।
চালু হওয়ার পরবর্তী ৩ দিনে আকাশপথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী থাকলেও একমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কোনো যাত্রী পায়নি। ফলে প্রথম দিন ফ্লাইট পরিচালনা করলেও পরেরদিন থেকে ফ্লাইট বন্ধ রাখে বিমান বাংলাদেশ। এদিকে টিকেট বিক্রির দিক থেকে অন্য দুই এয়ারলাইন্সের ধারে কাছেও নেই বিমান বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট চালুর প্রথম তিনদিনে দেশের তিনটি আকাশপথে যাতায়াত করেছেন ৩ হাজার ৪৫ জন যাত্রী। এর মধ্যে ফ্লাইট চালুর প্রথমদিন ১ জুন ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর আসা-যাওয়া করেছেন মোট ১ হাজার ৬৪ জন। ২ জুন ৯০১ জন, ৩ জুন সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০ জন। আগের তুলনায় ফ্লাইটসংখ্যা কমানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্লেনের ভেতর একসিটে যাত্রী ও একসিট ফাঁকা রেখে চলাচল করায় যাত্রী চলাচলের ক্যাপাসিটি কমেছে। তাই এই সংখ্যা আপাতত ‘সন্তোষজনক’ মনে করছে বেবিচক।
নতুন আঙ্গিকে খুলে দেয়া আকাশপথের চলাচল নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বিমান সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ফ্লাইট চালাচ্ছে, ফ্লাইটগুলো যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। এজন্যই প্রথম দু’দিনের তুলনায় তৃতীয়দিন যাত্রীও বেড়েছে।
এদিকে যাত্রী সংখ্যা ‘সন্তোষজনক’ হলেও তাদের প্রায় সবাই ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার এই দু’টি বেসরকারি এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করেছেন।
বেবিচক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ৩ দিনে আসা-যাওয়া করা ৩ হাজার ৪৫ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ২৪ জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করেছেন। বাকি ৩ হাজার ২১ জন ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারে। বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করেছে শুধুমাত্র ফ্লাইট চালুর প্রথম দিন ১ জুন। পরে ‘যাত্রী সংকটের’ কারণ উল্লেখ করে দ্বিতীয় দিন ২ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত সব ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয় তারা।
বিমানের এমন ‘বেহাল দশা’র বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপ-মহাব্যবস্থাপক সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি যাত্রী নেই। তাই ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে।’
যাত্রী না পাওয়ার বিষয়ে বিমানের কেউ কথা না বললেও আকাশপথের নিয়মিত তিনজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবদেকের। জব্বার হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, বিমান বাংলাদেশ অন্যসব এয়ারলাইন্সের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অন্য এয়ারলাইন্স যখন যাত্রীদের যাতায়াতে অভ্যস্ত করে তুলতে নতুন নতুন অফার দিচ্ছে। তখন বিমান আগের মতোই ফ্ল্যাটভাবী চলছে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ভাড়া ১ হাজার ৯৯৯ টাকা করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। কাছাকাছি ভাড়া নিচ্ছে নভোএয়ার। তবে তিনরুটেই অন্যদের চেয়ে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ।
মোস্তাক আহমেদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, যারা নিয়মিত আকাশপথে যাতায়াত করেন তারা নেহাৎ বিপদে না পড়লে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যবহার করেন না। বিমানে প্রায়ই পূর্বঘোষণা ছাড়া হুটহাট ফ্লাইট বাতিল করে, বাতিল করা ফ্লাইটের যাত্রীদের তেমন খোঁজ খবরও নেন না। সময়মতো অব্যবহৃত টিকেটের টাকা ফেরত দেয় না। বর্তমান করোনাকালে যারাই আকাশপথে চলাচল করছে, তারা খুব বেশি প্রয়োজনেই চলাচল করছে। তাই এই জরুরি মুহূর্তে এসব বাজে অভিজ্ঞতা এড়াতেই কেউ বিমান বাংলাদেশের টিকেট কিনছেন না।
এদিকে একাধারে ৫ দিনের ফ্লাইট বাতিলের পর এবার নতুন কৌশলে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বিমান। মাত্র ৩ থেকে ৫ লাখ টাকায় প্লেন ভাড়া করে (চার্টার) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ৭ রুটের যে কোনো বিমানবন্দরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে তারা। এই খরচে কেবলমাত্র ৫ ঘণ্টা প্লেনটি ভাড়া পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত ঘণ্টা ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে দীর্ঘ ৬৯ দিন বন্ধ থাকার পর ১ জুন ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। সেদিন থেকেই ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে এয়ারলাইন্সগুলো। এর মধ্য ২ জুন থেকে ৬ জুন বিমান বাংলাদেশ সব ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বাংলাদেশে ৪ টি এয়ারলাইন্স কোম্পানি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। তবে ২০ মার্চ থেকে ৩ মাসের জন্য ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।
এআর/এমএফ/এমএস