করোনাকালে বেঁচে থাকতে আলম মিয়াদের নিরন্তর লড়াই
রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে কাঁটাবন অভিমুখী ফাঁকা রাস্তায় একটি সাইকেলের হাতল ধরে দ্রুত হেঁটে সামনে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়স্ক একব্যক্তি। সাইকেলটি বেশ পুরনো। এটির সামনে বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রী ঝুলছে। পেছনে কেরিয়ারে লম্বা একটি লোহার বাক্স দেখা গেল।
কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক ওই ব্যক্তির কাছে সাইকেল না চালিয়ে হেঁটে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শামসুল আলম নামের পুরান ঢাকার বাসিন্দা পরিচয়ে ওই ব্যক্তি জানান, সাইকেলের চাকায় হাওয়া কম। পেছনের বাক্স ও মালামালসহ বেশ ওজন হওয়ায় হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন।
আলাপকালে জানা যায়, শামসুল আলম পুরান ঢাকার একটি লজেন্স ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে মালিক আপাতত ফ্যাক্টরি বন্ধ রেখেছেন। ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ যোগাতে তিনি আগে থেকেই লজেন্স ফ্যাক্টরিতে চাকরির পাশাপাশি বিকেলে অবসর সময়ে চকবাজার থেকে বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী কিনে এ সাইকেলে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। করোনার কারণে চাকরি চলে যাওয়ার পর এখন খেলনা বিক্রি করেই কোনোভাবে সংসারের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে করোনার কারণে আগের মতো দোকানপাট খোলা না থাকায় বেচাকেনা অনেক কম।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করেই সংসার চালিয়েছেন, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন এমনকি বড় মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। কখনো কারও কাছে হাত পাতেননি। সকালে চাকরি আর বিকেলে খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে বেশ ভালোই চলছিলেন। কিন্তু গত দুই মাস থেকে চাকরি না থাকা এবং দোকানপাট বন্ধ থাকায় খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে কষ্ট হলেও কারো কাছে হাত পাততে রাজি নন শামসুল আলম।
তিনি বলেন, যতদিন সুস্থ আছি পরিশ্রম করে সংসার চালানোর চেষ্টা করে যাবো। একথা বলে তিনি আবার সাইকেল ঠেলে সামনে এগিয়ে যান।
শামসুল আলম একা নন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তার মত হাজারও শামসুল আলম করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উপায়ে কষ্ট করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন।
এমইউ/এএইচ/এমকেএইচ