নার্সিং অধিদফতরে তুঘলকি কারবার, দুই বছরের পরের বদলি দুই সপ্তাহে
>> ৫৯ সিনিয়র স্টাফ নার্সকে মাত্র দুই সপ্তাহে বদলি
>> বদলিতে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ
>> কিছু করোনা হাসপাতালে নতুন নার্সদের পদায়ন হয়নি
>> নাটের গুরু একজন উপসচিব, কতিপয় অসৎ নেতার সাথে তার সখ্যতা
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরে চলছে তুঘলকি কারবার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জরুরিভিত্তিতে সম্প্রতি পাঁচ হাজারেরও বেশি নার্স নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বদলি/পদায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী নবনিয়োগ পাওয়াদের ক্ষেত্রে দুই বছরের শিক্ষানবিশকালে কোনো প্রকার বদলি করা যাবে না। কিন্তু নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫৯ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে পদায়নকৃত কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলি করেছে নার্সিং অধিদফতর। বদলি করাদের ১ জুন দুপুরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করার কথা বলা হয়েছে। নতুবা ২ জুন থেকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।
২৭ মে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সিদ্দিকা আক্তার স্বাক্ষরিত এ বদলির আদেশ জারি হয়। এ বদলি 'প্রশাসনিক প্রয়োজনে' করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া গত ১৩ মে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার স্বাক্ষরিত'বদলির আবেদন গ্রহণ সংক্রান্ত এক নোটিশে বলা হয়েছিল, 'এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের অধীন কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স/স্টাফ নার্সদের অনেক আবেদন পেন্ডিং থাকায় এখন নতুন করে কোনো দরখাস্ত/আবেদন গৃহীত হবে না। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন করে আবেদন গৃহীত হবে। বিষয়টি সকলের জ্ঞাতার্থে জানানো হলো।
এ ধরনের নোটিশের পর ১ জুলাইয়ের আগে কোনো প্রকার বদলির কথা না থাকলেও ওই নার্সদের বদলি করা হলো।
অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা অনুযায়ী দুই বছরের আগে বদলি ও পদায়নের সুযোগ না থাকলেও 'প্রশাসনিক প্রয়োজনে'র দোহায় দিয়ে নার্সিং সেক্টরে দুর্নীতি করছেন একশ্রেণির নার্স দালাল নেতা। তারা লাখ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী উপসচিবকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে নিয়ম ভেঙে পদায়ন ও বদলি করাচ্ছেন।
বদলি ও পদায়নে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
গত ৭ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ৫ হাজার ৫৪ নার্স নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ১৩ মে থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সরা তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নার্স নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু নার্সিং অধিদফতর থেকে নব-নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সদের করোনা হাসপাতালে পদায়নের তালিকা পাঠানো হলেও সে তালিকা অনুযায়ী পদায়ন করা হয়নি। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেককেই এমন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে যেখানে করোনা ইউনিট এখনও চালু হয়নি, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব নাটের গুরু। কতিপয় অসৎ নেতার সাথে তার সখ্যতা।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের নিয়োগ বদলি প্রদানের সার্বিক দায়িত্বে একজন মহাপরিচালক থাকলেও তার ওপর ছড়ি ঘোরান ওই উপসচিব। ইতোপূর্বে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের সর্বশেষ মহাপরিচালক ওই উপসচিবের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী বদলি ও পদায়ন না করায় তাকেই (মহাপরিচালক) বদলি করা হয়।
নীতিমালা ভঙ্গ করে বদলি ও পদায়নসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক সিদ্দিক আক্তার এবং পরিচালক (প্রশাসন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ কল রিসিভ করেননি।
এমইউ/জেডএ/জেআইএম