পেটের দায়ে বৃষ্টিতেও যাত্রীর খোঁজে বৃদ্ধ রিকশাচালক ইউসুফ আলী
বাইরে ঝুম বৃষ্টি। দূর থেকে ভেসে আসছে এশার নামাজের আজান। রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ৭০ বছর বয়সী রিকশাচালক ইউসুফ আলী।
বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে রাত ৮টার পর প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিধিনিষেধ রয়েছে। তার ওপর বৃষ্টি হওয়ার রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে।
সুনসান নীরবতায় হঠাৎ হঠাৎ তীব্র বেগে ছুটে যাচ্ছে কিছু প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। এছাড়া হাতেগোনা কয়েকজন রিকশাচালক যাত্রী ছাড়াই রাস্তায় ছুটোছুটি করছে। কিছু বিক্রির আশায় গাছের নিচে পান-সিগারেট বিক্রেতা এক হকারকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়।
রিকশাচালক ইউসুফ আলী ঘাড় ঘুরিয়ে বারবার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন। পরনে রেইনকোট থাকলেও মুখে মাস্ক নেই তার। বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগছিল তার চোখে-মুখে।
তিনি জানান, আয়-রোজগারের আশায় দুপুরে রিকশা নিয়ে বের হন। রাত ৮টা পর্যন্ত মাত্র চারজন যাত্রী পরিবহন করেছেন। ঘরে বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী রয়েছে। তিন ছেলে থাকলেও তারা এখন বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এতে তার কোনো দুঃখ নেই। এই বয়সেও রিকশা চালিয়ে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনোমতে জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু এই করোনাকালে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাফেরা কমে যাওয়ায় আয়-রোজগার আগের মতো নেই। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ও বিরূপ আবহাওয়া থাকলেও সংসার চালানোর খরচ জোগাতে রাস্তায় বের হয়েছেন বলে জানান ইউসুফ আলী।
অনেক অপেক্ষার পর ছাতা মাথায় এক যাত্রীকে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারে যাওয়া-আসার ভাড়া নিয়ে কথা বলতে দেখা গেল। যাত্রীটি জানালেন, তিনি সেখানে গিয়ে আধঘণ্টা দেরি করবেন, তারপর আবার একই রিকশায় ফিরে আসবেন। ভাড়া কত জানতে চাইলে ইউসুফ আলী ১৪০ টাকা চাইলেন। এরপর রিকশায় উঠে পড়লেন ওই যাত্রী। এ সময় ইউসুফ আলী পলিথিন বের করে যাত্রীর বুক বরাবর টেনে দিয়ে রিকশা নিয়ে রওনা হলেন।
বুধবার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তা-ঘাটে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম। মাঝে মাঝে দু-চারটে অ্যাম্বুলেন্স প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল দেখা গেলেও রাস্তায় মানুষ নেই বললেই চলে।
এ প্রতিবেদককে রাস্তায় দেখে একজন মোটরসাইকেল চালক এগিয়ে এসে কোথায় যাবেন জানতে চান। আপাতত কোথাও যাচ্ছেন না- জবাব পেয়ে কিছুটা হতাশ দৃষ্টিতে তাকান তরুণ মোটরসাইকেল চালক।
গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে তার কাছে জানতে চাইলে জানান, একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী তিনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত দুই মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। সংসার চালানোর জন্য সন্ধ্যার পর নিজের শখের মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। কিছু টাকা রোজগার করে বাসায় ফিরে যান বলে জানান তিনি।
এমইউ/এমএসএইচ/বিএ