একজন অন্যরকম বেনজীর
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, করোনাভাইরাসসহ প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী নির্দেশনা দিচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। অভিজ্ঞতা ও আধুনিকতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশকে। এগুলোর মধ্যেই থেমে নেই তার নিজস্ব কার্যক্রম। অব্যাহত রেখেছেন সামাজিক ও মানবিক কাজ। চলমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তসহ দুস্থদের নীরবে নিভৃতে সাহায্য করে যাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো দুই সাংবাদিক দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সিটি এডিটর হুমায়ুন কবীর খোকন ও সিনিয়র সাব-এডিটর মাহমুদুল হাকিম অপুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ। তাদের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান ও ঈদ উপহার দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী দৈনিক ভোরের কাগজের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক আসলাম রহমানের পরিবারকেও দুই লাখ টাকা অনুদান দেন এ পুলিশপ্রধান।
সময়ের দানবীর ড. বেনজীর আহমেদ সামাজিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, শুভানুধ্যায়ী ও সাংবাদিক পরিবারের প্রতি তার উদারতা উৎসর্গ করে দিচ্ছেন গোপনে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক পরিবারকে ঈদ উপহার হিসেবে চাল, ডাল, চিনি, সেমাইসহ মোট ১১ কেজি সমপরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছেন আইজিপি।
চলমান করোনাযুদ্ধে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে জীবন উৎসর্গ করেছেন ১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদেরকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রত্যেকের বাড়িতে সাংবাদিকদের মতোই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, শাড়ি-পাঞ্জাবি ও ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন আইজিপি।
পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল ভাড়া করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে ও আইসোলেশনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের খোঁজখবর রাখার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিদর্শন কমিটি তৈরি করেছেন। তাদের জন্য পাঠাচ্ছেন নিয়মিত ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করার মতো বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশকে শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক ও মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান আইজিপি মহোদয়। তিনি নিজে এসব কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারাও তার কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধরনের সামাজিক ও মানবিক কাজে এগিয়ে আসছেন। আর তাই বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সবার কাছে ‘মানবিক পুলিশ’ হিসেবেই নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’
গত ১৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের (আইজিপি) দায়িত্ব পান তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালে পুলিশ ক্যাডার হিসেবে যোগদানের মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু।
বাংলাদেশ পুলিশে বেনজীর আহমেদ একজন দক্ষ, পেশাদার, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিত। চাকরি জীবনে র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, পুলিশ সদর দফতরে ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ও ডিআইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পাশাপাশি বেনজীর আহমেদ পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডিএমপি কমিশনার হিসেবে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন অত্যন্ত সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন। এছাড়া ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অগ্নি ও বোমা সন্ত্রাস পেশাদারিত্বের সঙ্গে দমন করেন এই পুলিশপ্রধান। বিশেষ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস, বোমা সন্ত্রাস ও পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমণ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দমন করেন। নগরবাসীর জন্য ফরমালিনমুক্ত খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভেজালবিরোধী আন্দোলন শুরু করে সফলতা পান সাবেক এই র্যাব প্রধান।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) হিসেবে প্রথম পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন ড. বেনজীর আহমেদ। তার হাতে ধরেই যাত্রা শুরু পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বর্তমান পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট (পিআইও) ইউনিট। পিআইও ইউনিট সৃষ্টির পর পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগ কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে। ফলে পুলিশের সামগ্রিক কাজে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক কার্যক্রমে গতি আসে, যা পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
২০১০-২০১৫ মেয়াদে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ডিএমপিতে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন। তিনি ডিএমপির প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার সূচনা ও তা শেষ করেন। তার মধ্যে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম, পে-রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সিস্টেম, রেশন স্টোর সফটওয়্যার সিস্টেম, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম উল্লেখযোগ্য।
তার দায়িত্বপালনের এ সময়ে ডিএমপির অবকাঠামো উন্নয়নে এক নতুন যুগের সূত্রপাত হয়। মিরপুর পিওএমের সামগ্রিক আধুনিকায়ন, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, রাজারবাগের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ, আধুনিক মিডিয়া সেন্টার স্থাপন, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার, ডগ স্কোয়াড ও আটটি নতুন থানা স্থাপন অন্যতম। তিনিই প্রথম সরকারি কোনো অফিসে মিডিয়া সেন্টার স্থাপনের নজির স্থাপন করেন।
জনগণকে পুলিশি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রথম মহানগরীতে বিট পুলিশিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন ড. বেনজীর আহমেদ। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনি চালু করেন ডিএমপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ডিএমপির অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল। নগরবাসী ডিএমপির এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন তাদের হাতের মুঠোয় পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে তিনি সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেন। যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু বছরের আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলার সাত হত্যা মামলাসহ কতিপয় ঘটনায় যখন র্যাবের ভূমিকা ও ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ তখন দৃঢ়তার সঙ্গে সেই নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন ড. বেনজীর। তিনি সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনসম্মুখে র্যাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২০১৬ সালে হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা রাখেন ড. বেনজীর আহমেদ। তিনিই প্রথম মিডিয়াতে কৌশলী ও সাহসী বক্তব্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মিডিয়া তাদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে। যা পরবর্তী সময়ে অপারেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে কার্যকর ও যুগোপযোগী ভূমিকাও পালন করেন এই পুলিশপ্রধান। ফলে বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
তার নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযানে সফলতা অর্জন করেছে র্যাব। র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছেন। আবার অনেকে অভিযানের সময় গুলি বিনিময়ে নিহত হয়েছেন।
বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। উপমহাদেশে তিনিই প্রথম নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন্সের অধীন মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সেকশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কসোভো মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন ড. বেনজীর।
ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত জীবন
বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, এলএলবি ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি থেকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমিতে পেশাগত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে রেক্টরস মেডেল অর্জন করেন ড. বেনজীর আহমেদ। এছাড়া চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রেকর্ডসংখ্যক সর্বোচ্চ ছয়বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
ড. বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিন কন্যাসন্তানের জনক তিনি।
এআর/এসআর/এমকেএইচ