চট্টগ্রামে করোনায় কাউন্সিলর-আ.লীগ নেতার মৃত্যু
‘চারদিক থেকে যে তথ্য পাচ্ছি, তাতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রিয় অনেক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। একজন তো শনাক্ত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেলেন। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।’ মধ্য রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই কথাগুলো লিখেছেন চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক একরামুল হক।
ঈদের পরে চট্টগ্রাম নগরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হবে ধারণা করা হচ্ছিল, কিন্তু এতটা হবে তা কেউ কল্পনা করেনি। মঙ্গলবার (২৬ মে) ৫০৭ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে ৮৯ জনই নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের শীর্ষ এক কর্মকর্তাও।
এছাড়াও মঙ্গলবার (২৬ মে) রাত ৯টার দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এই সংবাদ পেতে না পেতেই খবর এসেছে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেওয়া ফৌজদারহাটের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসের (বিআইটিআইডি) ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই তথ্য জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ডা. শাকিল আহমেদ নিজেই।
এদিকে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে নগরীর মেডিকেল সেন্টারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুবুল হক চৌধুরী এটলি। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে তার দেহেও করোনার উপসর্গ ছিলো।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, ‘রাতে এটলি ভাইয়ের শরীর খারাপ লাগলে সাড়ে ১১ টার দিকে মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাত পৌনে একটার দিকে মারা যান তিনি। বর্তমানে তার মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৮ জনের করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের তিনটি ও কক্সবাজারের একটি ল্যাবে ৫০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা শনাক্ত হয়। র্যাব, পুলিশ ও চিকিৎসকসহ আক্রান্তদের তালিকায় আছেন বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের শীর্ষ এক কর্মকর্তাও।
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘন্টায় চট্রগ্রামে মোট চারটি ল্যাবে ৫০৭ টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে ৯৮ টি করোনা পজিটিভ আসে। এর মধ্যে নগরীর ৮৮ টি। বাকি ১০ টি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার। জেলার মধ্যে লোহাগাড়ায় ১ জন, চন্দনাইশে ১ জন, পটিয়ায় ১ জন, রাউজানে ২ জন, ফটিকছড়িতে ২ জন ও সন্দ্বীপে ৩ জন।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিআইটিআইডিতে ৩৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে নতুন করে ৫০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় আরও একজন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
একই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪৬ জনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মহানগর এলাকার ৪৪ জন। বাকি ২জন বিভিন্ন উপজেলার।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১০০টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবেও ৯ জনের নমুনা পরীক্ষা ১জনের করোনা মিলেছে।
আবু আজাদ/এমআরএম