ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রোজায় ইফতারিও মেলেনি, হোটেল শ্রমিকদের কাছে ঈদ যেন বিলাসিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ২৪ মে ২০২০

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির প্রাদুর্ভাব রোধে দুই মাস ধরে দেশের প্রায় সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ। হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় এ খাতের শ্রমিকদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। দুই মাস ধারদেনা করে চললেও এখন আর তাদের জীবন-যাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য অনেকে ঠিক মতো ইফতারিও করতে পারেননি রোজায়। তাদের কাছে ঈদ উদযাপনের বিষয়টি এখন যেন এক প্রকার বিলাসিতা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ খাতের শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর হোটেল শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আল-আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের তো দুঃখের শেষ নাই। গত দুই মাস থেকে আমাদের মালিক কোনো বেতনও দিচ্ছেন না, খবরও নিচ্ছেন না। আমরা একেকটা রেস্টুরেন্টে ২০ থেকে ৩০ বছর এমনকি ৫০ বছর ধরেও কাজ করছি। অথচ দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে মালিকরা আমাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না। ফোন করলে ফোনও ধরছেন না। অথচ শ্রম আইন অনুযায়ী অন্যান্য সেক্টরে কাজ না করলেও শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন। আমরা কিছুই পাচ্ছি না। আগামীকাল ঈদ। ঈদ তো দূরে থাক, এই রমজান মাসে আমরা রোজা রেখে ইফতারিও ঠিক মতো মেলাতে পারিনি।’

এ শ্রমিক নেতা বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রধানমন্ত্রী এ সেক্টরের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তা নিয়ে মালিকরা তো আমাদের বেতন দেবেন, কিন্তু এখন তারা প্রণোদনার দিকে দৌড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী হোটেল শ্রমিকদের অনুদান ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা পর্যায়ের হোটেল মালিকরা তাদের সব শ্রমিকের তালিকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঢাকার হোটেল রেস্টুরেন্টের মালিকরা রেস্টুরেন্টপ্রতি ২২ জনের নাম পাঠিয়েছেন। অথচ একেকটি হোটেলে ১০০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক এমনকি আরও বেশি শ্রমিক রয়েছেন। এটা এজন্য করা হয়েছে মালিকরা বিভিন্ন ধরনের ফিতে ফাঁকি দেয়ার জন্য কলকারখানা অধিদফতরে শ্রমিক দেখান কম। এখন যদি তারা পুরো শ্রমিকের তালিকা সরকারকে দেন, তাহলে তো তারা ধরা পড়বেন। এজন্য কম শ্রমিক দেখিয়ে আমাদের ক্ষতি করছেন।’

আল-আমিন বলেন, ‘ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকি। দুই মাস ধরে ভাড়া দিতে পারছি না, বাড়ির মালিকও চাপ দিচ্ছেন। একই অবস্থা এ খাতের সব শ্রমিকের। ঢাকা মহানগরীতে হোটেল-রেস্টুরেন্টের শ্রমিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার। তবে অধিকাংশই গ্রামের বাড়ি চলে গেলেও বিভিন্ন কারণে ১০ হাজার শ্রমিক ঢাকায়ই রয়েছেন। যারা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন, তারাও সংকটে আছেন। যারা ঢাকায় রয়েছেন তারা আরও বেশি সংকটে রয়েছেন। শ্রমিকদের নগদ অর্থ ও ত্রাণের জন্য আবেদন করে ঢাকা জেলার ডিসির নিকট আমি দুটি চিঠি দিয়েছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে চিঠি দিয়েছি। আমাদের যেন বেতন দেয়া হয় এ জন্য শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশ কমিনশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমরা কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকে বিভিন্ন জায়গার ভোটার। তাই ত্রাণের জন্য কোনো কাউন্সিলরের কাছে গেলে তারা বলেন, আমরা তো তাদের এলাকার ভোটার নই। আবার অনেক ক্ষেত্রে হালকা-পাতলা কিছু পাই, তা দিয়ে তো আর আমাদের সংসার চলে না। তাই তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের যেমন কাজ না করলেও ৬৫ শতাংশ বেতন দেয়া হবে সে পরিমাণ বেতন রেস্টুরেন্ট খাতের শ্রমিকদের জন্যও দিতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সবাইকে বেতন দেয়া হবে। ৯০ শতাংশের মত শ্রমিক গ্রামে চলে গেছেন। রোজার আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যখন রেস্টুরেন্ট খোলার অনুমতি পেলাম তখন আমরা অনেক শ্রমিককে বলেছিলাম কিন্তু অনেকেই আসতে রাজি হয়নি। অনেকেই আসতে চাইলেও পরে আমরাই না আসার জন্য বলেছি। সব মিলিয়ে আমরা হোটেলই খুলতে পারলাম না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কিছু শ্রমিককে বিকাশের মাধ্যমে বেতনের কিছু অংশ দিয়েছি। তবে সেভাবে দিতে পারিনি। আমরা কাউকে চাকরিচ্যুত করিনি। তবে প্রকৃতপক্ষে গত জানুয়ারি থেকে আমাদের ব্যবসায়ও ধস। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অনুদান এবং আমাদের জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখনো ব্যাংকগুলো এ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তাই আমরা এ সুবিধাগুলোও পাচ্ছি না।’

একটা হোটেলে ১০০ বা ২০০ জন শ্রমিক থাকলেও তাদের মধ্য থেকে অনুদানের জন্য মাত্র ২২ জনের তালিকা সরকারের কাছে পাঠিয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় প্রায় আট হাজার রেস্টুরেন্ট রয়েছে, আর সারাদেশে রয়েছে ৩০ হাজার। ৩০ হাজার হোটেলের সব শ্রমিকের নাম দিলে শ্রমিক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯ লাখ। সরকার তখন দেখবে এত শ্রমিক, এত টাকা! তাই প্রথমে আমরা ২২ থেকে ৩০ জনের নাম দিয়েছিলাম। তবে এখন আমরা এ সংখ্যা বাড়াবো। যারা আছে সবার নামই দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমইউএইচ/এইচএ/এমকেএইচ