২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৭৩ জন শনাক্ত, মৃত্যু আরও ২০ জনের
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৪৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৮৭৩ জন। এটি একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩২ হাজার ৭৮ জনে।
শনিবার (২৩ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নয় হাজার ৯৭৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে ১০ হাজার ৮৩৪টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৮৭৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৭৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ২০ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৯৬ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছয় হাজার ৪৮৬ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের ১৬ জন পুরুষ ও চারজন নারী। চারজন ঢাকা বিভাগের, আটজন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন করে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের এবং একজন করে সিলেট ও খুলনা বিভাগের। হাসপাতালে মারা গেছেন ১৫ জন, বাসায় চারজন এবং হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন একজন। বয়সের দিক থেকে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী দুজন, ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব আটজন, ষাটোর্ধ্ব তিনজন এবং সত্তরোর্ধ্ব একজন।
গত শুক্রবারের (২২ মে) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। নয় হাজার ৭২৭টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬৯৪ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমলেও শনাক্ত রোগী বেড়ে হয়েছে নতুন রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল এক হাজার ৭৭৩ জনের। সে তথ্য জানানো হয় গত ২১ মের বুলেটিনে।
শনিবারের বুলেটিনে বলা হয়, করোনা রোগী শনাক্ত বিবেচনায় এখন পর্যন্ত দেশে সুস্থতার হার ২০ দশমিক ২২ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ২৮৬ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন চার হাজার ৩০৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪১ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৬৯ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ছয় হাজার ৩৪টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি। ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০৬টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৩২২ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৪১৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৮৮ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ পাঁচ হাজার ২৫৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৫ হাজার ১৫৭ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।
বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় সোয়া ৫৩ লাখ। মারা গেছেন তিন লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে ২১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।
পিডি/এমইউ/এইচএ/এমএস