ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনায় নিরাপদ চলাচলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাইসাইকেল

প্রকাশিত: ১১:৫৯ পিএম, ১৮ মে ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। রাস্তায় ভাড়ায়চালিত কিছু বাহন থাকলেও সেসবে রয়েছে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ বাহন হিসেবে তরুণদের পাশাপাশি কর্মজীবীদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দুই চাকার বাইসাইকেল। কর্মস্থলে সহজে যাতায়াতের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে পরিবেশবান্ধব এ বাহনটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে দেশ কার্যত অবরুদ্ধ। গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে চলছে নিষেধাজ্ঞা। যেসব পরিবহন চলছে সেখানেও রয়েছে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি। সবসময় বাহন পাওয়া যায় না। যাতায়াতের খরচও বেশি। এসব বিষয় চিন্তা করে এখন নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে বাইসাইকেল বেছে নিচ্ছেন কর্মজীবীরা।

ফলে মহামারির এ সময়ে বাইসাইকেল বিক্রি বেড়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব বাহনটির বিক্রি বাড়াতে ইতোমধ্যে বাইসাইকেলের বিক্রির ওপর নানা অংকের নগদ মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি হোম ডেলিভারিও দিচ্ছে বিভিন্ন বিক্রয় ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে নগদ মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন অফার দিচ্ছে দেশের জনপ্রিয় বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’। ঘরে বসেই দুরন্ত বাইসাইকেল কেনার সুযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্দিষ্ট মডেলের দুরন্ত বাইসাইকেল কিনলেই ক্রেতাদের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে তারা।

jagonews24

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুরন্ত বাইসাইকেলের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) চৌধুরী ফজলে আকবর জাগোনিউজকে বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানুষ এখন খুব সচেতন। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গণপরিবহন এড়িয়ে বাইসাইকেলের প্রতি ঝুঁকছে। বাইসাইকেল ব্যয় সাশ্রয়ী এবং এর মাধ্যমে সহজে সব জায়গায় চলাচল করা যায়। করোনা ঝুঁকি মোকাবিলায় বাহনটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর মধ্যে আবার স্কুলও বন্ধ। করোনার কারণে বাচ্চাদের এখন বাসায় থাকতে হচ্ছে। এ কারণে বাচ্চাদের সাইকেলগুলোও বিক্রি হচ্ছে। গত মাস থেকে আমাদের সাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। আগামীতে বিক্রি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছি।

নিজস্ব পরিবহনে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম। এছাড়া সাইকেল ব্যবহারে শারীরিক ব্যয়াম হয়। তাই নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব বাহন বাইসাইকেল অনলাইনে বিক্রিতেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

এ বিষয়ে অনলাইনে কেনাকাটার জনপ্রিয় সাইট ‘অথবা ডটকম’র হেড অব বিজনেস মাহমুদুল হক উল্লাস জাগোনিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে বাইসাইকেলের অর্ডার বেড়ে গেছে। আগের তুলনায় বাইসাইকেলের অর্ডার দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। করোনার ঝুঁকিতে মানুষ গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে সাইকেলে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। যার কারণে বাইসাইকেল কিনছে। কেউ অর্ডার করলে আমরা যথাসময়ে তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।

করোনাকালে বাইসাইকেল কিনে সুফল পাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বলেন, করোনা ছুটির মধ্যেও ব্যাংক খোলা রয়েছে। প্রতিদিন অফিস করতে হয়। কিন্তু পরিবহন না থাকায় প্রথমে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। পরে সহজ সমাধান হিসেবে বাইসাইকেল কিনলাম। এখন প্রতিদিন সাইকেলে অফিসে যাওয়া-আসা করছি।

বেসরকারি চাকরিজীবী মাহবুব বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এখন গণপরিবহন বন্ধ। অটোরিকশাসহ কিছু পরিবহন চালু আছে, তবে সব সময় পাওয়া যায় না। যাও পাওয়া যায় ভাড়া বেশি, আবার করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এখন বাইসাইকেলে অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। এতে করে বাহন খরচ বেচে যাচ্ছে, করোনা ঝুঁকিও কম। পাশাপাশি সাইকেল চালানোর কারণে এখন শরীর-স্বাস্থ্যও ভালো লাগে।

jagonews24

রাজধানীর বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টারের একটি সাইকেল দোকানের বিক্রেতা সাব্বির বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে গত ১০ মে থেকে দোকান খোলা হয়েছে। মানুষ এখন সাইকেলের প্রতি ঝুঁকছে। বড়দের সাইকেলগুলোর চাহিদা বেশি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে ২০ শতাংশ মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু সাইকেলে বিশেষ নগদ মূল্যছাড় রয়েছে।

শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে চলাচলের অনন্য মাধ্যম হয়ে উঠছে বাইসাইকেল। সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে জোর দিতে রাস্তায় সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা হচ্ছে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, ইংল্যান্ডের ইয়র্ক, লিচেস্টার ও ব্রাইটনসহ অনেক শহরে হাঁটার ও সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দে‌শে করোনার প্রাদুর্ভাবে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছু‌টি ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই ছুটির মেয়াদ পর্যায়ক্র‌মে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সবশেষ এ ছুটি বাড়িয়ে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত করেছে সরকার।

এসআই/এইচএ/এমআরএম