ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনায় গলাব্যথা-শ্বাসকষ্টের ‘ওষুধ’ নিয়ে আইনজীবীর গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ০৯ মে ২০২০

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। মরণঘাতী এই ভাইরাসের প্রতিষেধক উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। যদিও করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও নাগালের বাইরে।

করোনার উপসর্গগুলো হলো- হাঁচি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট। আপাতত হাইড্রোক্লোরোকুইনের প্রয়োগ মাধ্যমে চলছে এ ভাইরাসের চিকিৎসা। সম্ভাব্য অ্যান্টিভাইরাল রেমডিসিভির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বিকল্প হিসেবে আদা ও লবঙ্গ গরম পানির সঙ্গে পান করে উপকার পেয়েছেন। যারা অতিমাত্রার শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাদেরকে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ভেন্টিলেটরে চিকিৎসা দিচ্ছে উন্নত দেশগুলো।

তবে করোনার এমন দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের উপশমে ব্যবহৃত হতে পারে ‘কুস্ত’ নামের একটি গাছের শিকড়। ইসলামী চিকিৎসাশাস্ত্রে এটি ‘প্রোফেটিক মেডিসিন’ নামে পরিচিত। সহিহ তথা বিশুদ্ধ হাদিসে এটি গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে।

গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্টের উপশমে ‘কুস্ত’ এর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনের এক গবেষণাপত্রে। একইসঙ্গে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ‘ক্যামব্রিজ বিজসেন অ্যান্ড ল’ একাডেমির’র অধ্যক্ষ। ‘রিসার্চ অন প্রোফেটিক মেডিসিন টু কমব্যাট কোভিড-১৯’ শীর্ষক তার গবেষণাপত্রটি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইলে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরেও এটি পাঠিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বের মানুষ আক্রান্ত। কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি জানার আগ্রহ থেকে পড়াশোনা শুরু করি। একপর্যায়ে সহিহ বুখারীতে গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট (লাং ইনফেকশন) উপশমের একাধিক হাদিসের বর্ণনা খুঁজে পাই। হাদিস অনুসরণ করে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারত ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কুস্ত’ এর কার্যকারিতা নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। যেহেতু করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা প্রকট হয় সেহেতু ‘কুস্ত’ প্রয়োগে উপশম মিলতে পারে।’

এরইমধ্যে গত ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ারের (এএমসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর সই করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- করোনা প্রতিরোধে ‘চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতিকে মূলধারায় আনতে হবে।’ আদা ও লবঙ্গ মিশ্রিত গরম পানি, কালো জিরা/ মধু, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলমূল গ্রহণ করুন, যা করোনা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

গবেষণাপত্রে তিনি বলেছেন, ‘আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গাছ মূল্যবান উপাদান যার থেকে প্রতিষেধক তৈরি হয়। যদিও করোনা ভাইরাসজনিত শ্বাসকষ্টের উপশমে ‘কুস্ত’ এর ব্যবহার এখনও হয়নি। তবে এটির প্রয়োগে ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট কমবে।’

গবেষণাপত্রে সহিহ বুখারী হাদিসের (৫৬৭৮) উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন কোনো রোগ তৈরি করেননি যার প্রতিষেধক নেই। হাদিসে ‘যাতুল জানব’ অর্থ প্লিউরিসি বা লাং ইনফেকশন, এ সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত আছে।’

‘বুখারীর হাদিসে (৫৭১৫) প্লিউরিসির বিষয়ে উম কাইস বিনতে মিহসান (রা.) থেকে বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, প্লিউরিসি ও গলা ব্যথা থেকে সুস্থ হতে ‘কুদ আল হিন্দ’ মুখের ভেতরে এক পাশে রাখ। এতে সাতটি রোগের উপশম রয়েছে।’

‘বুখারী আরেকটি হাদিসে (৫৬৯৬) হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের গলাব্যাথা হলে তাদের গলায় চাপ না দিয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কোস্তাস দাও।’

‘ইবনে মাজাহর (৩৫৯৬) হাদিসে হযরত যায়িদ বিন আকরাম বর্ণিত রাসুল (সা.) পরামর্শ দিয়েছেন, প্লিউরিসির (যাতুল জানব) অসুস্থতায় কোস্তাস, মেমেসিলিন (ওয়ারস) ও অলিভ অয়েল (যাইত) মুখের একপাশে দাও।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘হাদিসে বর্ণিত এই ‘কুদ আল হিন্দ’ হলো কুস্ত যা সাধারণত কোস্তাস নামে পরিচিত। দুই ধরনের কুস্ত রয়েছে-কুস্ত আল হিন্দ ও কুস্ত আল বাহরি। কুস্ত আল হিন্দ কিছুটা গাঢ় এবং কুস্ত আল বাহরি হলো- কিছুটা হালকা উজ্জ্বল। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে কুস্তের ফুল করোনা সাদৃশ্য। এই কুস্ত ব্যাকটেরিয়া এবং প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এটা ‘কুথ’ নামে পরিচিত। ই-কমার্স সাইট আমাজন ডটকম, ই-বে এবং সুন্নাহ হিলিং ইউকেতে অনলাইনে এটি বিক্রি হচ্ছে।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘হাদিসের ভাষ্য অনুসরণ করে ইতিমধ্যে ‘কুস্ত’ সংগ্রহ করেছি। এই কুস্ত একটি গাছের শিকড়, রাজধানীর চকবাজারে পাওয়া যায়। কেজি ৮০০-১০০০ টাকা। এটির কার্যকারিতা ও প্রয়োগ কিভাবে হবে তা নির্ধারণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), স্বাস্থ্য অধিদফতর, গবেষক, বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা কাজ করতে পারেন। আমাদের দেশে সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কাজ করতে পারে।’

এফএইচ/এফআর/এমএস