ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

চট্টগ্রামে করোনার সেঞ্চুরি, একদিনেই শনাক্ত ১৬

আবু আজাদ | প্রকাশিত: ০১:৫৯ এএম, ০৫ মে ২০২০

চট্টগ্রামে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ১৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে করোনার ‘সেঞ্চুরি’ পূর্ণ হলো।

করোনা যতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে, একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লকডাউন ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার প্রবণতা। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের ইঙ্গিত দিয়েছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর গত ৪০ দিনে চট্টগ্রামে মোট ১০৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় শনাক্ত আরও ৫ জন চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এখন চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা ১১০ জন।

সোমবার (৪ মে) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘‌‌বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন ২২ ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ১২ জন চট্টগ্রাম নগরের ও ৪ জন উপজেলার বাসিন্দা’।

তিনি বলেন, ‘মানুষ যদি নিজের ভালো না বোঝে, তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করার থাকে না। ভাইরাসটা দ্রুতই ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঘরে থাকার অভ্যাস করতে হবে। নয়তো এ বিপর্যয় ঠেকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়’।

এদিকে বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে একজন আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (৩০)। তিনি সীতাকুণ্ডের কুমিরা জোড়ামতল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। একজন ৪৮ বছর বয়সী ব্যক্তি বর্তমানে বিআইটিআইডিতেই আইসোলেশনে আছেন, একজন নগরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা, তার বয়স ৩৭। দক্ষিণ হালিশহরে দুই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজনের বয়স ৩৪ ও অপরজন ৭৪ বছর বয়সী।

এছাড়া নগরের এনায়েত বাজার এলাকায় দুই জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এদের একজন ইতোমধ্যেই মারা গেছেন (৪৭)। এছাড়া অপর এক যুবক (২৪) ও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া আকবারশাহ থানা এলাকার পুরুষ (৫১), উত্তর কাট্টলী পুরুষ (৪০), পাহাড়তলী মৌসূমী আবাসিক (৪১) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক (২৫) বিজিবি সদস্যের ছেলে বলে জানা গেছে।

এদিকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে দুই পুলিশ সদস্যও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের একজনের বয়স ৩৫, অপরজন ২৫ বছর বয়সী তরুণ। এদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখা এএসআই। তিনি বর্তমানে বাসায় আছেন। অন্যজন কনস্টেবল পদবীর। তিনি চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এছাড়া বাঁশখালী উপজেলায় নতুন করে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, পটিয়ায় সমবয়সী এক ব্যক্তি ও লোহাড়াগায় ২৫ বছর বয়সী এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বাকি শুধু হাটহাজারী:

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও উপজেলাগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র হাটহাজারী উপজেলা এখনো করোনামুক্ত রয়েছে। এর বাইরে বাকি সবগুলো উপজেলায় করোনারোগী শনাক্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরে মোট ৭৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরের পাহাড়তলী, আকবরশাহ ও হালিশহর থানা এলাকাকে করোনার প্রথম হটস্পট হিসেবে শনাক্ত করে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।

উপজেলাগুলোর মধ্যে করোনার হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সাতকানিয়া উপজেলাকে। এ পর্যন্ত উপজেলাটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ১৬ জন ব্যক্তি। আর কোনো উপজেলা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এর কাছাকাছিও নেই। এখন পর্যন্ত সীতাকুন্ড উপজেলায় ৪ জন, বোয়ালখালী উপজেলায় ২ জন, পটিয়ায় ৩ জন, আনোয়ারা ২ জন, চন্দনাইশে ২ শিশু, ফটিকছড়িতে ১ চিকিৎসক, মিরসরাই ২ জন, লোহাগাড়া ২ জন, রাঙ্গুনিয়া ১ জন ও দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া বাঁশখালীতে কর্মরত এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন (তবে তাকে নগরের বাসিন্দা হিসেবে শনাক্ত হরা হয়)

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হওয়ায় শুরু থেকেই খুব ভয়ে ছিলাম। বিদেশ প্রত্যাগতদের যখন কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল, তখন জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের মাত্র ৪০ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ মিলে আমরা ৫০০ জনকে শনাক্ত করেছিলাম যারা সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে ফিরেছেন।

পরে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। তবে আমি মনে করি এখনও আমাদের উপজেলা থেকে প্রয়োজনের চাইতে অনেক কম নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে, কে জানে কার শরীরে সুপ্ত রয়েছে করোনা?’

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুবকরা:

বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে যুবক ও মধ্য বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৬৭ জনই ২১ থেকে ৫১ বছরের মধ্যকার বয়সী তরুণ ও যুবক।

এছাড়া শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ জন, ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে আরও ১১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮৮ পুরুষ ও ২২ নারী। এছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও রাজবাড়ীতে করোনা শনাক্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ ব্যক্তিও এই তালিকাও রয়েছেন।

এ নিয়ে চট্টগ্রামে এক শিশু, চার পুরুষ ও দুই নারীসহ মোট আট করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ২৪ জন। বর্তমানে ৫৮ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৮৭ জন।

প্রতিদিনেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা:

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত তিনদিনে নতুন তিনটি উপজেলা ও নগরের ছয়টি স্থানে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে আরও তিনজনের।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। নগরীর দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি তার ওমরাফেরত মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় করোনা রোগী শনাক্ত হন ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে।

গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হন তিনজন। একদিন বিরতি দিয়ে ১০ এপ্রিল বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে আরও দু’জনে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনা রোগী শনাক্ত হন তিনজন। ১২ এপ্রিল চট্টগ্রামে সে সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়ায়। আক্রান্তদের একজন শিশু ওই দিন দিবাগত রাতে জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। এছাড়া ওই দিন প্রথমবারের মতো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যও করোনা আক্রান্ত হন।

১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া দু’জনের একজন নারী করোনা শনাক্তের আগেই আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মারা যান। ১৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে এক চিকিৎসক, সাতকানিয়ার পাঁচ যুবক ও নগরের সাগরিকা এলাকার এক পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত হন। এর পরের চারদিন ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয় যথাক্রমে ৫, ১, ১ ও ১ জনে।

তবে ১৯ এপ্রিল হঠাৎ আবারও চট্টগ্রামে বাড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এদিন ৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এছাড়া পুরোনো এক রোগীর আবারও পজিটিভ আসে। ২১ এপ্রিল নতুন একজন করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে। ২২ এপ্রিল নতুন ৩ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে। ২৪ এপ্রিল নগরের দামপাড়ায় আরও একজন রোগী শনাক্ত হয়।

২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হয় নতুন দুই রোগী। তাদের একজন ছিলেন ৩০ বছর বিয়সী ও অপরজনের বয়স ছিল ৪০ বছর। ২৬ এপ্রিল হটাৎ বেড়ে চট্টগ্রামে আরও ৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। এদের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার উপজেলার।

পরদিন সোমবার (২৭ এপ্রিল) আবারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে আক্রান্তের সংখ্যা। এদিন চট্টগ্রামে শনাক্ত ৯ জনের তালিকায় ছিলেন র‌্যাব, পুলিশ ও চিকিৎসক।

২৮ এপ্রিল ১০০টি নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে ৩ জনের। ২৯ এপ্রিল এক পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন, ৩০ এপ্রিল এক পুলিশ সদস্য, ১ মে এক সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ৩ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। পরের দিন ২ মে সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় নতুন তিন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

সর্বশেষ দুই দিনে শনাক্ত ২৯ জন:

চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতির অবনতিটা কেমন হয়েছে তা শেষ দুই দিনের পরিস্তিতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। রোববার (৩ মে) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় পাঁচজনের।

পরে আজ সোমবার সকালে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে পরীক্ষা করা নমুনায় এদিন (রোববার) চট্টগ্রামের আরও ৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে রোববার মোট ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।

সর্বশেষ সোমবার (৪মে) চট্টগ্রামে এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ ১৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে গত দুই দিনেই ২৯ করোনা রোগী শনাক্ত হলো। যা গত ৪০ দিনে শনাক্ত রোগীর ২৬ শতাংশ।

এমআরএম