ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনায় বেশি ঝুঁকিতে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা

জসীম উদ্দীন | প্রকাশিত: ১০:৩১ পিএম, ০১ মে ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। করোনায় ফ্রন্টলাইন ফাইটার ডাক্তার ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পুলিশেও। সর্বশেষ ১ মে হিসেব অনুযায়ী আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৭ পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে শুধু ডিএমপিতেই ৩২৮ জন। মারা গেছেন চারজন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৮ জন। আর আক্রান্তদের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের সদস্যই বেশি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের জীবনের নিরাপত্তায় অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকারসহ জরুরি সেবার সবাই ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংকটের প্রথম থেকেই বিদেশ ফেরতদের অবস্থান শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত, আক্রান্তদের হাসপাতালে পাঠানো, লকডাউন নিশ্চিত, ত্রাণ বিতরণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত থেকে শুরু করে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি ধান কাটতে কৃষকের বা শ্রমিকের যোগান দেয়া, চাষির সবজি বিক্রির বন্দোবস্ত করতেও মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে পুলিশ।

ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নানা কর্মকাণ্ডের জন্য পুলিশ সদস্যদের সরাসরি জনসাধারণ এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে। ফলে নিজেদের মধ্যেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বিদায়ের আগে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, পুলিশের ট্রেনিং নেই, তবু করোনাযুদ্ধে মাঠে আছে। স্বাভাবিকভাবে পুলিশের এই সময়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব গণজমায়েতে বাধা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।

আর সেই কাজটি করতে গিয়ে বাইরে ডিউটির সময় পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তারা সংক্রমিত হচ্ছেন বলে মনে করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বেশির ভাগের শরীরে এই রোগের কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। কয়েকজনের সামান্য জ্বর থাকলেও বেশির ভাগই সুস্থ মানুষের মতো। আবার ভর্তির পর ৬-৭ দিনের মধ্যে অনেকে সুস্থ হচ্ছেন।

শুক্রবার (১ মে) পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের ৬৭৭ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ জন। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৮ সদস্য। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ২০ সদস্যের করোনা টেস্টে ফলাফল পজিটিভ এসেছে।

আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ্য হয়েছেন ৫৫ জন।এছাড়া, বর্তমানে পুলিশের ১৭৪ সদস্য আইসোলেসনে রয়েছেন এবং কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন এক হাজার ২২৫ জন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছেন চার পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে তিনজন ডিএমপির একজন এসবির। তারা হলেন, ডিএমপির কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০), এএসআই মো. আব্দুল খালেক (৩৬), ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো. আশেক মাহমুদ (৪৩) এবং পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই নাজির উদ্দীন (৫৫)।

এদের মধ্যে সর্বশেষ শুক্রবার (১ মে) সকালে এসআই নাজির উদ্দীন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

বেশি ঝুঁকিতে মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা

করোনায় মাঠ পর্যায়ে ডিউটি করেন এমন সদস্য ও বিশেষ করে পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ডিএমপির পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) দক্ষিণের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়জিত কনস্টেবলরা। আক্রান্ত মৃতের সৎকার, আক্রান্তের পর পালালেও সেই রোগীকে ধরে আনা, আক্রান্তের বাসা বা ভবন লকডাউনে সরাসরি কনস্টেবলদের উপস্থিতিই বেশি। প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ায় তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কনস্টেবলদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দরকার।

তিনি বলেন, পেট্রল ডিউটি, চেকপোস্ট কিংবা ট্রাফিক সিগন্যালেও দায়িত্ব পালনকারী বেশিরভাগ সদস্য পুলিশ ব্যারাকে থাকেন, যেখানে একটি রুমে অন্তত ১২ জন সদস্য বসবাস করেন। এটা তাদের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ।

পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে পুলিশের ২ লক্ষাধিক সদস্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রথমত তাদের মধ্যে ব্যপকভাবে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। নিয়মিত সেসব সচেতনতার বার্তার বিষয়ে সদস্যদের আপডেট করা হচ্ছে। এছাড়া, সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত পুলিশ লাইনসে গিয়ে সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন।

পাশপাশি পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভসসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পুলিশলাইনস এবং ব্যারাকে পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অফিস এবং পুলিশ লাইনসের প্রবেশমুখ সুরক্ষিত করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যারাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায়ে বেডগুলো রাখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্যদের পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখতে নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আক্রান্তদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পুলিশ হাসাপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী এবং সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, পুলিশ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে করোনার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। কোনো কারণে যদি আরও উন্নত চিকিৎসা কিংবা অবজারভেশনের দরকার হয় বা কোনো কারণে সম্ভব না হয় তাহলে তারা পুলিশ হাসপাতালে যোগাযোগ করে করোনার যে স্পেশালাইজড হাসপাতাল সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

আর পুলিশ ব্যারাকের প্রতিটা ফ্লোর বা যেখানে যেখানে করোনার জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবাণুনাশক দ্বারা ধৌত করা হচ্ছে। যারা ডিউটিতে যাচ্ছেন তাদের আলাদাভাবে হাত ধোয়ার সরঞ্জাম ও মাস্ক, পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তারা নিজেরা যেন আগে বিধিগুলো মেনে চলেন সেজন্য নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে পুলিশ সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং চারজন গর্বিত সদস্য দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের জন্য গর্বিত।

বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা তাদের এই ত্যাগকে, এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন এবং মনোবলের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। হাসপাতালে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের মনোবল যেন অটুট থাকে সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাদের লাইন চিফরা হাসপাতাল ভিজিট করছেন। এছাড়াও অসুস্থদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর রাখতে সদর দফতর থেকে স্ব স্ব ইউনিটকে জানানো হয়েছে।

জেইউ/এএইচ