তাপমাত্রা মেপে বাজারে প্রবেশ, বিক্রেতার হাতে গ্লাভস মুখে মাস্ক
প্রতিটি ক্রেতাকেই থার্মাল স্ক্যানারের বৈতরণী পার হয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ভেতরে প্রবেশ করেও নিজের খেয়াল খুশিমতো ঘোরাফেরা করতে পারছে না কেউই। বিক্রেতাদের সবার হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক আর মাথায় হেড কাভার। মাস্ক ছাড়া নিষিদ্ধ ক্রেতাও। সুনির্দিষ্ট দূরত্বে, বৃত্তে দাঁড়িয়েই বাজার করতে হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এসব বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করেই চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো চালু হল করোনা জয়ে জনবান্ধব কাঁচাবাজার। মূলত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রিয়াজউদ্দিন বাজারকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের পার্কিং এলাকায় সরিয়ে নিয়ে ঠিক এভাবেই সাজিয়েছে নগরে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন এই জনবান্ধব কাঁচাবাজার উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রামে এ নিয়ে ২০টি কাঁচাবাজার খোলা জায়গায় স্থানান্তরিত হলো।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, মূলত চট্টগ্রামের বৃহত্তম কাঁচাবাজার রিয়াজুদ্দিন বাজারই স্থানান্তর করা হয়েছে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন সংলগ্ন পার্কিং কর্নারে। স্থানান্তরিত স্থানটিই করোনা প্রতিরোধ উপযোগী করে সাজানো হচ্ছে। সাধারণত বাজারে দোকানের সামনেই বৃত্তের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এই বাজারে বৃত্ত দেয়া হয়েছে মাঠজুড়ে। শুধু বাজার কিনতেই নয়। ঢুকতে, বের হতে এবং ভেতরে হাঁটার সময়ও দূরত্ব বজায় থাকবে এই বাজারে। বাজারের সকল বিক্রেতার জন্যই মাস্ক, গ্লাভস এবং হেড কাভার বাধ্যতামূলক। ক্রেতার জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক। এসব ছাড়া ক্রেতা বিক্রেতা কাউকেই বাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, একইভাবে সর্দি, কাশি কিংবা জ্বরাক্রান্ত কেউ বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না। এজন্য বাজারে প্রবেশের পূর্বেই তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানারে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে হাত ধোয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ বেসিন বসানো হয়েছে দুটি। নগদ টাকা লেনদেনে নিরুৎসাহিত করতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও শুরু করেছেন কিছু ব্যবসায়ী।
এছাড়াও বাজারে থু থু ফেলা, অযথা ঘোরাঘুরি করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাজারের মধ্যেও করোনা সচেতনতার জন্য বেশকিছু সচেতনতামূলক ব্যানার ঝোলানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অভিনব এই বাজার সম্পর্কে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত বাজার উপহার দিতেই আমাদের এই আয়োজন। বাজার থেকেই করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি থাকে। আমরা চেষ্টা করছি সেই ঝুঁকি শূন্যে নামিয়ে আনতে।
এর আগে এই জনবান্ধব কাঁচাবাজার উদ্বোধন করে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, ধর্মীয় অনুশাসন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে দেশে এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কম।
খোলা জায়গায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এরকম বাজার বসানোর কাজটি প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে লাখ লাখ সবজি উৎপাদনকারী রয়েছে। তারা সঠিকভাবে যদি সবজি বিক্রি করতে না পারেন, দুর্ভোগে পড়বেন। সেজন্য খোলা জায়গায় বাজার বসানোর মাধ্যমে সুন্দর বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে পুলিশ। এরকম বিপণন ব্যবস্থায় তারা লাভবান হবেন। দেশ স্বাভাবিক থাকবে।
মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, সবাই লকডাউনে থাকলেও পুলিশের তা নেই। তারা ২৪ ঘণ্টা জনগণের সেবায় নিয়োজিত আছে। মানুষের জীবন-যাপন কীভাবে সহজ করা যায়, তার ব্যবস্থা করছে পুলিশ। অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে, তাদের বাসা পাহারা দিচ্ছে পুলিশ।
এফআর/পিআর