চোখের জলে শহীদ মিনার ছাড়লো ওরা
‘মা, এখন আমি কী করবো?’ ছেলে আকাশের প্রশ্ন শুনে বুক ফেটে কান্না এলেও কাঁদলেন না লিপি আক্তার। আমরণ অনশনরত অসুস্থ ছেলের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে শুধু বললেন, চিন্তা করিস না বাবা, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।’
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী লিপি আক্তার জানান, জীবনে কখনও এভাবে পথে নামবো ভাবিনি। ছেলেমেয়েদের কোচিং থেকে বাসা আনা নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল আমার জীবন। আন্দোলনে নেমে গত ২৭ দিন ছেলেকে সাহস যোগাতে রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি, পুলিশের তাড়াও খেয়েছি। কিন্তু ন্যায় সঙ্গত এ আন্দোলনে সরকারের কেউ সাড়া দিল না। ফলে শূন্য হাতে চোখের জলে সকলকে এভাবে বিদায় নিতে হলো। আল্লাহ এ অন্যায় সহ্য করবেন না।
জাতীয় তেল, গ্যাস, বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের অনুরোধে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা শরবত পান করে আপাতত আন্দোলন স্থগিত করে অনশন ভঙের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ত্যাগের প্রাক্কালে অভিভাবক লিপি আক্তার এ কথা বলেন।
তিনি জানান, তিন সন্তানের মধ্যে ছেলে রুম্মান ওরফে আকাশ সবার বড়। ছেলে বেলা থেকেই তার খুব শখ ছিল ডাক্তারি পড়ার। গত বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিলেও চান্স পায়নি। গত এক বছর দুটি কোচিং সেন্টারে লাখ টাকা খরচ করে কোচিং করেছে। দিন নাই রাত নাই পড়াশুনা করেছে। এবার কোনো একটি সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পাবে এ ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল সে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস আকাশের স্বপ্ন কেড়ে নিলো। এবার তো সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিতে পারবে না।
শুধু আকাশ বা তার মা লিপি আক্তার নন, তাদের মতো বহু অভিভাবক ও শিক্ষার্থী চোখের জল ফেলে আজ (বৃহস্পতিবার) বাদ মাগরিব কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আমরণ অনশনস্থল ত্যাগ করেন। ফলে বিকেল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিচ্ছেদের সুর বেজে উঠে।
এদিকে, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বলেন, সরকারের কেউ ন্যূনতম সহানুভূতি জানাতে আসলেন না এটা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু এভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও পড়াশুনার ক্ষতি করে জীবন বিপন্ন করে আমরণ অনশনে বসে থাকবে তাও ঠিক নয়।
তিনি বলেন, দুদিন পরে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। আমার অনুরোধ তোমরা আন্দোলন আপাতত স্থগিত করে পরীক্ষা দিতে যাও। টানা ২৭ দিন তোমাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে থেকে জনগণ বিশ্বাস করেছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
আনু মোহাম্মদ তার বক্তৃতায় বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত। এ কারণে বার বার দাবি উঠার পরও তারা তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তিনিসহ অন্যান্যরা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করবেন। তিনি বলেন, শিক্ষার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ আন্দোলন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এমইউ/এসকেডি/এএইচ/পিআর