ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অনশন স্থগিত

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা দুইদিন ধরে চলা আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ এবং বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের অনুরোধে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি স্থগিত করেন। এ সময় আনু মোহাম্মদ প্রশ্নপত্র ফাঁসে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের এ অনশন ভাঙানো হয়। এর আগে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মাকসুদ এসে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন। এছাড়াও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আজ দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে এবং পুরো শিক্ষাখাত অন্যান্যখাতের মতো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করা হচ্ছে। শিক্ষাখাতে ধ্বস নামানোর পেছনে যারা জড়িত তারাই প্রশ্নফাঁস করেছে। আর এ ভয়াবহ অন্যায় এবং অপরাধের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন তাদের আন্দোলন বাংলাদেশের জন্য একটি আশার বাণী।’

তিনি বলেন, ‘আমি এ আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম থেকেই ছিলাম। আমি এটাকে একটি দায়িত্ব মনে করি। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষাখাতে যে নৈরাজ্য দুর্নীতি চলছে সেখানে শিক্ষক হিসেবে আমাদের থাকা উচিত। শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং অভিবাবকদের নিয়ে একটি বড় প্রতিরোধ গড়ে না তুললে শুধু শিক্ষাখাত নয় বাংলাদেশকেও রক্ষা করা যাবে না।’
 
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। এবং এ আন্দোলনের মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে আমাদের শত্রুদের। বোঝা যাচ্ছে এই ধরনের কাজের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাবান লোকেরা জড়িত। না হলে আমরা প্রথমদিন থেকেই যে পরামর্শ দিচ্ছিলাম আপনারা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আপনি যদি দেখেন যে ঘটনাটা ঘটেনি। তাহলে পরিষ্কার হবে যে এ আন্দোলনের কোন যৌক্তিকতা নেই।’
 
আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল প্রথম দিনই পরীক্ষা পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা। সেটা না করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকেরা প্রমাণ করেছেন যে তাঁরা এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত। এটার কারণে তাদের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ভয়ংকর প্রবণতা। তারা যদি মনে করেন যে তারা এটা অস্বীকার করার মাধ্যমে তাদের কলঙ্ক সমাজ থেকে মুছে যাবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করবেন। কারণ এ থেকে প্রমাণ হয় এর সাথে তারা জড়িত।’

এসময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে একটি গণ তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি দেশের জনগনের স্বার্থে কাজ না করে জনশত্রুদের স্বার্থে কাজ করে, তাহলে জনগণেরই দায়িত্ব নিজেদের স্বার্থে নিজেদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যেহেতু সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। সেহেতু আমাদেরই উচিত হবে সংবিধানের আলোকে নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সুতরাং সরকার যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন করেনি সেহেতু জনস্বার্থেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। এ কমিটি যথাযথভাবে কাজ করবে। সকল মহলের সাথে কথা বলে স্বচ্চতার সাথে কাজ করবে। এটার আসল কারণ কি? প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার প্রমাণ কি? এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কোন কোন মহলের যোগাযোগ রয়েছে এবং এ থেকে বের হওয়ার জন্য কি কি করণীয়? এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবেন তদন্ত কমিটি।

তিনি আরো বলেন, ‘এ কমিটি অন্যান্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টিও যোগ করার চেষ্টা করবে। এ তদন্ত কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একটি পঙ্কিল আবর্তের মধ্য থেকে উঠে আসবেন। এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এ শিক্ষাখাতকে রক্ষা করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে রক্ষা করবেন।

এসময় আগামী ১৯ তারিখে গণতদন্ত কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার কথাও জানান এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘ওই দিন আমাদের সম্ভাব্য যারা সদস্য তাদের নিয়ে সভা করে আমরা ঘোষণা দেব। আশা করি এ মাসের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়ে পরবর্তী আন্দোলনের পর্ব আমরা ঘোষণা করতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, সারাদেশের সকল মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন করে আসছে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, ফাঁসকৃত প্রশ্নের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নিতে হবে। এই দাবিতে টানা ২৭ দিন ধরে তারা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের সাড়া পাওয়া যায়নি।
 
আন্দোলনের অংশ হিসেবে সর্বশেষ বুধবার সকাল ১১ টা থেকে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। অনশনে সাত জন আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরমধ্যে দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিটে অধ্যাপক আনু মুহম্মদ এসে আন্দোলনকারীদের এ অনশন ভাঙেন।

এমইউ/এমএইচ/এসকেডি/এএইচ/পিআর