৩ কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষায় দুটি পিসিআর মেশিন, একটি ধারে আনা!
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ৯টিতেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তের আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। কক্সবাজার ছাড়া বাকি ১০টি জেলার সম্ভাব্য করোনা রোগী শনাক্তের একমাত্র ঠিকানা চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি)। অথচ এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিতে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর বা পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিন আছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে একটি আবার সংকট শুরুর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধারে আনা!
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার সংস্থাটি প্রকাশিত সর্বশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে বলেছে, এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে এই ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করতে দেশগুলোকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
কিন্তু বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন জেলায় মোট ১৭টি ল্যাবরেটরিতে কারোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। এসব ল্যাবরেটরিতে দিনে সর্বোচ্চ পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৯০৫টি নমুনা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ জেলার তিন কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র দুটি পিসিআর মেশিন।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু চট্টগ্রামেই ২০টির ওপর পিসিআর মেশিন আছে। মূলত সমন্বয়ের অভাবে বর্তমান সময়ের এই মহামূল্যবান সম্পদ ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও বাড়বে। পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়ায় অনেক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যেমন চিকিৎসার আওতায় আসছে না, তেমনি আইসোলেশনে না থেকে সাধারণভাবে চলাফেরা করায় আরও অনেকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের বিশেষায়িত এ হাসপাতালে শুরু হয় কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা। প্রায় ১১০০ টেস্ট কিট নিয়ে মাত্র দুটি পিসিআর মেশিনে প্রায় এক মাস ধরে চলছে করোনা পরীক্ষা।
বিআইটিআইডির ল্যাবপ্রধান ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক শাকিল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে শুধু দুটি পিসিআর মেশিন আছে যেগুলোতে আমরা এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষার কাজ করছি। এর মধ্যে একটি সংকট শুরুর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধারে এনেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুটো মেশিন সকাল-বিকেল দু’বেলা বসালে ১৮০টি পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু শুধু পিসিআর বা টেস্ট কিট হলেই পরীক্ষা সম্ভব হয় না। এ পরীক্ষার আলাদা তিনটি স্তর আছে, প্রতিটি স্তরেই আলাদা প্রয়োজনীয় উপাদান ও রিঅ্যাজেন্টের প্রয়োজন হয়, যা সবসময় পাওয়া যায় না। এর বাইরে দক্ষ জনশক্তির অভাবতো রয়েছেই।’
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বে করোনা আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পর বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে আক্রান্তের সংখ্যায়। দেশগুলো ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করেছে। অনেক দেশে দিনে ১০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে প্রতিদিন হাজার খানেক পরীক্ষায় সন্তুষ্ট থাকছি। এ কারণে আমাদের অজান্তেই চারপাশে হাজারো করোনা রোগী ঘুরছে ফিরছে আর সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে যদি আমরা চুপচাপ থাকি তাহলে দেশের করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে।’
বিআইটিআইডিতে নমুনার স্তূপ
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। শুরুতে বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে না এলে পরীক্ষা করা হয়নি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। ৩০ মার্চ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের আওতা বাড়ানো শুরু হয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুজনের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ২৬ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরুর পর গত ২৫ দিনে মোট এক হাজার ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৯ জন, যার মধ্যে পাঁচ ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
বিআইটিআইডির হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৫৮ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি জেলায় (কক্সবাজার ছাড়া) মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দুই কোটি ৬১ লাখ ৩৩ হাজার ২৯ জন)। এই বিপুল জনসংখ্যার জন্য করোনা পরীক্ষার এই হার একেবারেই নগণ্য বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিদিন সংগৃহীত নমুনার চাইতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা কম হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক শাকিল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে দৈনিক ২০০টির বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আমরা চাইলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ১০০ থেকে ১২০টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারি না। এ কারণে প্রতিদিনই বিআইটিআইডিতে নমুনার স্তূপ জমা পড়ছে। বিকল্প ব্যবস্থা করা না গেলে আমরা নমুনাতেই চাপা পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ১২ ঘণ্টা কাজ করছি। আমরা সাতজন মানুষ রাতদিন খেটে এর বেশি কোনোভাবেই পরীক্ষা করতে পারি না। এভাবে আমরা কয়দিন চালাতে পারব জানি না। আমাদেরও কোয়ারেন্টাইনে যেতে হতে পারে।’
করোনা মোকাবিলায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সমন্বয় সেলে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘বিআইটিআইডিতে নমুনাজট তৈরি হয়েছে। বিভাগের অন্য জেলাগুলো থেকেও প্রচুর নমুনা আসতে থাকায় এই একটি কেন্দ্র চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই নমুনা পৌঁছানোর পরও পরীক্ষা সম্পন্ন হতে দু-তিন দিনও সময় লেগে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় কেন্দ্র স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। এখানে পরীক্ষা শুরু হলে এ সংকট কিছুটা কাটবে বলে আশা করছি।’
তবে পরীক্ষা বাড়াতে নগরের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে একটি ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হলেও চমেকে এখনও আসেনি পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিন, যা ঢাকা থেকে গত সপ্তাহেই আসার কথা ছিল।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে বর্তমানে করোনা সামাজিক সংক্রমণ চলছে। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সিওর হওয়ার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের লোকজনকে বেশি পরীক্ষা করছি তাই তারা শনাক্তও বেশি হচ্ছেন। আমরা যদি পরীক্ষার পরিমাণ আরও বাড়াতে পারি তাহলে দেখতেন আরও অনেকে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হতো।’
চট্টগ্রামেই ২০ পিসিআর-প্রশিক্ষিত জনবল, নেই শুধু সমন্বয়
করোনা পরীক্ষায় বিআইটিআইডিসহ চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিনের স্বল্পতার কথা বলা হলেও জাগো নিউজের নিজস্ব অনুসন্ধানে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে অন্তত ২০টি পিসিআর মেশিনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া মাত্র সাতজন ব্যক্তি যখন পুরো বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন তখন হাতের কাছে থাকা প্রশিক্ষিত মাইক্রোবাইলজিস্ট ও জনশক্তিকে ব্যবহারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে পিসিআর মেশিন রয়েছে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে অন্তত পাঁচটি সচল পিসিআর মেশিন রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম শাখা, চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমিসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ১০টির বেশি পিসিআর মেশিন রয়েছে। আছে পিসিআর মেশিনে ভাইরাস পরীক্ষায় প্রশিক্ষিত জনবলও।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পিসিআর মেশিন ও প্রশিক্ষিত জনবল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষা সম্ভব।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) প্রফেসর জুনায়েদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস শনাক্তরণের পরীক্ষার ব্যবস্থার করার কথা জানিয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ল্যাব তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। ঢাকা থেকে একটি টিম আসার কথা রয়েছে, তাদের অপেক্ষায় আছি। ল্যাব পরিদর্শন করে তারা রিপোর্ট দিলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’
আছে পিসিআর আছে অভিজ্ঞতা, যত লুকোচুরি করোনা পরীক্ষায়!
নিজেদের অনুসন্ধানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিন ও অভিজ্ঞ জনবল থাকার কথা জানার পর জাগো নিউজের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু জাতির এই দুঃসময়ে নিজ থেকে করোনা পরীক্ষায় এগিয়ে আসা তো দূরের কথা, তাদের হাবভাবে অনেকটা পালিয়ে থাকার মতো।
রোববার (১৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার পরীক্ষার সুযোগ আছে কিনা জাগো নিউজের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ জোবাইদুল আলমের কাছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভাগে প্রচুর পিসিআর মেশিন আছে। কিন্তু সুরক্ষিত কোনো ল্যাব নেই। এ রোগ ছোঁয়াচে তাই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরীক্ষা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে আপনারা নিশ্চয় জেনেছেন, চীনের ল্যাব থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য পিএসএল ল্যাব প্রয়োজন। এছাড়া তা হতে হবে অন্তত পক্ষে লেভেল-২ পর্যায়ের। এছাড়া এ ধরনের ল্যাবে নেগেটিভ প্রেসারের ব্যবস্থা থাকতে হয়, অন্ততপক্ষে তিন কক্ষের ব্যবস্থা থাকতে হয়। এছাড়া করোনা প্রতি মুহূর্তের মিউটেশন (জিন বদলাচ্ছে) হচ্ছে এ অবস্থায় করোনা পরীক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ।’
একই বিষয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, চট্টগ্রামের (বিসিএসআইআর) চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার এবং পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা, চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার মো. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। এছাড়া প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার মো. রেজাউল করিম ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করতেই তিনি সংযোগ কেটে দেন। এরপর বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) প্রফেসর জুনায়েদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে জানান, শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএসআইআর গবেষণাগার, চট্টগ্রাম বা মেরিন ফিশারিজ নয়, চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় পিসিআর মেশিন ও প্রশিক্ষিত টেকনেশিয়ান রয়েছে। যারা চাইলেই সুরক্ষিত ল্যাবে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা সম্ভব।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাতে অনেক প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও আমরা করোনা পরীক্ষায় ব্যবহার করতে পারি। যারা ঝুঁকির কথা বলছেন, করোনা যদি নির্মূল না করা যায়, তাহলে কি আমরা কেউ এই ঝুঁকির বাইরে থাকব? তাহলে কেন আমরা করোনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রস্তুতি নেব না, পরীক্ষা শুরু করব না? ঢাকা-চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোর বাইরে যে প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে, তাদের আউটসোর্সিং হিসেবে ব্যবহার করতে সমস্যা কোথায়? আসলে অনেকেই সব জেনে বুঝে ঝুঁকির কথা বলে করোনা পরীক্ষায় এগিয়ে আসছেন না, রাষ্ট্রও তাদের নিয়ে সমন্বিত কাজের চিন্তা এখনো করতে পারেনি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রেজাউল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতি এখন ইতিহাসের অন্যতম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাষ্ট্রকে কেন বলতে হবে, উচিত ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোরই স্বপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে আশা। আমি অবসরে এসেছি আজ ১০ বছর। কিন্তু খুব ইচ্ছে করছে এই সময়ে যদি জাতির কোনো কাজে লাগতাম। আপনি যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছেন তাদের কাছে পিসিআর মেশিন আছে। এর বাইরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও মেশিনসহ প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক। এর সবই রাষ্ট্র চাইলে ব্যবহার করতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ফাইল উল্টালেই জানা যায়, তাদের কাছে কী আছে কী নেই। এই দুঃসময়ে যদি আমরা এসব সম্পদের ব্যবহার না করি কখন করব? স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত এখনই এ লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার চিত্র
ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মালদ্বীপে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে ৫ হাজার ৩৬৩ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭ মার্চ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগী ২১ জন।
ভুটানে প্রতি ১০ লাখে ১ হাজার ৫১১, পাকিস্তানে ৩৩২, শ্রীলঙ্কায় ২২৩, নেপালে ২১৬ এবং ভারতে ১৭৭ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভারতে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। এ পর্যন্ত শনাক্ত মোট রোগী সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে।
আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পর বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে আক্রান্তের সংখ্যায়। দেশগুলো ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করেছে। একই সঙ্গে সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় জোর দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে প্রতি ১০ লাখে ১৭ হাজার ৭৫৮, জার্মানিতে ১৫ হাজার ৭৩০, স্পেনে ১২ হাজার ৮৩৩, যুক্তরাষ্ট্রে ৯ হাজার ৩৬৭ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ হাজার ৪২৬ জনের করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় রোগী শনাক্তের প্রথম থেকে পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। সংক্রমণের বিস্তারও তারা অনেকটা সামলে নিয়েছে।
আবু আজাদ/বিএ/পিআর