টিসিবি পণ্যের ক্রেতা বাড়ছে, চাহিদা থাকলেও মিলছে না আটা ও ডাল
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্র্রাকের মাধ্যমে বিক্রিত পণ্যের চাহিদা নিত্যদিনই বাড়ছে। বাজার মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামের (প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা, সয়াবিন তেল ৮০ টাকা, মসুরের ডাল ৫০ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫ টাকা) কারণে প্রায় প্রতিটি ট্রাকের সামনে পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে।
একসময় টিসিবি পণ্য নিতান্তই হৃতদরিদ্ররা কিনতেন- এমনটা বলা হলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সকল আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই টিসিবির কম দামের পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সবাই প্রচণ্ড রোদেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।
চাহিদার তুলনায় পণের সরবরাহ কম থাকায় অনেকেই একসঙ্গে সব পণ্য কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। পরদিন আগে এসে লাইনে সিরিয়াল দিয়ে বাকি পণ্য কেনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আজ জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে দেখেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নির্দিষ্ট সামাজিক (শারীরিক) দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে নারী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে তারা বলেছেন, মসুরের ডাল ও আটাসহ আরও দু-একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করলে মানুষ উপকৃত হতো।
রাজধানীর নিউমার্কেটের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অপেক্ষাকৃত কম বয়সী এক নারী। সাভারের একটি ওয়াশিং ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। তার স্বামী গার্মেন্টস কর্মী। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ বেতন না দিয়েই ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়। গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বামীও গ্রামের বাড়ি চলে যায়। একাকী বাসায় থাকতে ভয় পাওয়ায় তিনি ঢাকা কলেজের বিপরীতে মিষ্টির গলিতে মামার বাসায় চলে আসেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, স্বামী গ্রামে গিয়ে আটকা পড়েছে, মামার বাসায় উঠে হাতের কিছু জমানো টাকা খরচ করে বাজার-সদাই করেছি। গত এক ঘণ্টা ধরে সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলব তা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।
টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়ানো আরেক ভদ্রলোক বললেন, দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তিন কেজি মসুরের ডাল চাইলে এক কেজির বেশি দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। এক কেজি ডাল কিনতে এতক্ষণ লাইনে থেকে পোষায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কমে এ পণ্য বিক্রি করায় তার মতো অসংখ্য নিম্নআয়ের মানুষ খুশি। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি আটা কিনতে আসলেও এখানে আটা বিক্রি হচ্ছে না।
অন্য ক্রেতারাও বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা প্রয়োজন।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ