ভর্তুকি দিয়ে কৃষক ও কৃষিখাতকে টিকিয়ে রাখতে হবে
কৃষক ও কৃষিখাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন বলেছে, লকডাউন পরিস্থিতির ফলে দেশের কৃষিখাত ইতোমধ্যেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। কৃষক তার ফসলের উৎপাদন খরচও পাচ্ছে না, কখনও তার পচনশীল পণ্য ক্রেতা না পেয়ে নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে আর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হবে।
তারা বলেন, এমন অবস্থায় কৃষিখাতকে সরকারি ক্রয় ও ভর্তুকি মারফত টিকে থাকতে সহায়তা না করলে পুরো দেশের মানুষের ওপরই তা মহামারির সময় ও পরবর্তীতে ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করবে। এমনকি তা দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
শনিবার (১১ এপ্রিল) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের আহ্বায়ক এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও সমন্বয়ক মো. মহসিন ভুইয়া এসব কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় প্রয়োজনেই এ সময় কৃষিকে বাঁচানো সরকারের অগ্রাধিকার হতে হবে। অবিলম্বে কৃষিখাতকে বাঁচাতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়, পোল্ট্রিসহ সামগ্রিকভাবে কৃষিখাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আগামী বোরো মৌসুমে বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমপক্ষে ৩০ লাখ টন নির্ধারণ করা এবং প্রতি ইউনিয়নে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানিয়ে বলেছেন, সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি গত ২ এপ্রিল চিঠি দিয়ে খাদ্য অধিদফতরকে বোরা মৌসুমে সাড়ে সতের লাখ টন ধান এবং চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, মোট সাড়ে সতের লাখ টন ধান-চালের মধ্যে ধান ক্রয়ের কথা বলা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ টন, বাকি সাড়ে এগার লাখ টন হলো চাল। কিন্তু কৃষক চাল উৎপাদন করে না, ফলে চাল কিনবে চাতাল মালিকদের কাছ থেকে।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে চাল নয়, কমপক্ষে ৩০ লাখ টন ধান সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়ের দাবি জানিয়ে বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার যদি ৫০ লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনতে পারে তাহলে বাংলাদেশের সরকার কেন ৩০ লাখ টন কিনতে পারবে না?
তারা আরও বলেন, গত বছর কৃষক ধানের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছে শুধু নয়, মজুরের অভাবে ক্ষেতের ধান কাটতে না পেরে মনের দুঃখে ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এ বছর যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে খেয়াল রেখে সরকার-কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি অধিদফতরকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এবার কৃষিশ্রমিক সংকটের পাশাপাশি নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দিনমজুরদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হাওরের ধান সময়মতো না কাটতে পারলে দেশে বড় ধরনের খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে। কারণ হাওরে ধান কাটতে খুব অল্প সময় পাওয়া যায়। এর মধ্যে ধান কাটা না হলে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধান তলিয়ে যেতে পারে। সে কারণেই ওই অঞ্চলের কৃষকদের সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত হার্ভেস্টিং মেশিন সরবরাহ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষিশ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কেএইচ/বিএ/এমকেএইচ