ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নিজেরা কম খেয়ে পশুপাখির মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তারা

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ০৫:১৩ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০২০

কেউ হাঁড়িতে ভাত চড়িয়েছেন, কেউ ব্যস্ত মুরগির মাংস কাটাকাটিতে। পাশে সাবান-শ্যাম্পু হাতে নিয়ে একটা কুকুরকে গোসল করাতে ব্যস্ত কয়েকজন। হঠাৎ এসে ব্রেক কষে থামল সেনাবাহিনীর টহলরত একটি গাড়ি।

গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামলেন কয়েকজন সেনাসদস্য ও একজন কর্মকর্তা। ওই সেনা কর্মকর্তা একটু ধমকের সুরেই প্রশ্ন করলেন, ‘আপনারা কি জানেন না, দোকানপাট বন্ধ, ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশ রয়েছে?’

Katabon-1

এ সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত লোকগুলো সেনাসদস্যদের দিকে এগিয়ে এসে কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, দোকানপাট তো গত কয়েকদিন যাবতই বন্ধ রেখেছি। করোনার ভয়েতো রাস্তায় মানুষই নামে না। আয় রোজগার টোটালি নাই। বিক্রির জন্য দোকান খুলি নাই, এ যে বোবা প্রাণীগুলো ওদের খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় দোকান খুলি। নিজেরা অভুক্ত থেকে হলেও প্রাণীগুলোকে খাওয়া-দাওয়া করানো, গোসল ও দোকানপাট পরিষ্কারের জন্য খুলছি স্যার। একটু পরেই বন্ধ করে দেবো।’

Katabon-2

এবার সেনা কর্মকর্তা নরম সুরে বললেন, ‘ভালো কাজের জন্য খুলেছেন ভালো কথা, কিন্তু নিজেরাই আবার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারেন, খেয়াল রাখবেন।’ এ কথা বলেই গাড়িতে উঠে চলে গেলেন তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেতের অদূরে কাঁটাবন পশুপাখি বিক্রির মার্কেটের সামনের ঘটনা এটি।

Katabon-3

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত লকডাউন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাস্তা-ঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। সরকারি নির্দেশে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। ছোটবড় শপিংমল, মার্কেটও বন্ধ। কিন্তু রাজধানীর কাঁটাবনের পশুপাখির মার্কেটটি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় কিছু সময়ের জন্য দোকান মালিক-কর্মচারীরা খোলেন। ক্রেতার কাছে বিক্রির আশায় নয়, বরং বন্দী কুকুর, বিড়াল, খরগোসসহ বিভিন্ন প্রাণী ও প্রজাতির পাখিদের খাঁচা পরিষ্কার, দোকান-পাট ঝাড়ু দেয়া, পশুপাখিদের গোসল করানো ও খাবার খাওয়ানোর জন্যই দোকান খোলেন তারা।

Katabon-4

সরেজমিন পরিদর্শনকালে কাঁটাবনের পশুপাখি বিক্রেতাদের বেশ কয়েকজনকে দোকান খুলে বিভিন্ন
ধরনের খাবার রান্না করতে দেখা যায়। অনেকে কুকুরের গায়ে সাবান ও শ্যাম্পু মেখে গোসল করাচ্ছিলেন।

ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করতে দেখে কয়েকজন ছুটে এসে বলেন, ‘ভাই, দেইখেন, আমরা দোকান খুলে বসেছি বলে রিপোর্ট কইরেন না। বেচাকেনা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন লইয়া বিপাকে পড়ছি। কিছু সঞ্চয় করা টাকা ভাইঙ্গা সংসার খরচ চালাইতাছি। কয়দিন এমনে চলবো কে জানে। নিজেরা কম খেয়ে হলেও দোকানের পশুপাখিদের যত্নআত্তি করতেই দোকান খুলছি।’

এমইউ/এমএসএইচ/পিআর