প্রতিবেশীদের সচেতন করতে ফেসবুক লাইভে ব্যারিস্টার সুমন
এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নিজের প্রতিবেশীদের সচেতন করার জন্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের নিজের বাড়ির পাশে ফেসবুক লাইভে এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার আঞ্চলিক ভাষায় সম্পূর্ণ লাইভ করেছেনে তিনি।
বুধবার (৮ এপ্রিল) প্রতিবেশী মানুষকে সচেতন করার জন্য এলাকার লোকজনকে নিয়ে তিনি লাইভে যান। তখন সুমন জাতিসংঘের বরাত দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ অনেক মানুষ মারা যেতে পারে। আর করোনায় মানুষ যদি সচেতন না হয় তা হলে আগামীতে রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
লাইভের শুরুতেই ব্যারিস্টার সুমন বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। আমি এখন পর্যন্ত এত মানুষ এককানো কইরা দাঁড়াইছি না। তোমরার সাথে দাঁড়াইছি, একটা মাত্র কারণ। এইটা হইল গিয়া তোমরা আমার প্রতিবেশী।
তিনি বলেন, তোমরা গরিব হও ধনী হও তোমরা আমার প্রতিবেশী। আমার বাসা যেহতু এইখানে এখন আমার শিবির হইলো গিয়া আমার প্রতিবেশী। আর কারো সামনে এভাবে ওপেন হয়ে কথা কইছি না। আমি তোমরা রে আজকে যে কারণে এখানে আনছি ধরো কোনো প্রতিবেশী হিসেবে আমার কাছে যদি কোনো খবর থাকে। এইডা তোমরা রে আমার জানানো উচিত কিনা।
তিনি বলেন, আমার কাছে যদি কোনো বিপদের খবর থাকে তোমরা রে আমার প্রতিবেশী হিসেবে জানানো উচিত কিনা বল। যদি কোনো খুশির খবর থাকে তাও তোমরারে জানানো উচিত কিনা বলো। প্রতিবেশী যদি না খাইয়া থাকে। প্রতিবেশী যদি না খাইয়া মারা যায়। তাহলে পাপের ভাগিদার আমি হব কিনা। এটা আমার কথা না ইসলামের কথা।
তিনি মানুষের উদ্দেশে বলেন, একটা জিনিস শুইনা রাখ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব কী তা বুঝনি? সামাজিক দূরত্ব হলো মিনিমাম তিন ফুট দূরে থাকা। একটা জিনিস শুইনা রাখ, আমরা এমন এক বিপদের মুখোমুখি আছি। তোমরা কোনো দিন দেখছনি আমাদের মতো লোকজন বাসার মধ্যে হামায়া গেছিগা। আগে কইত নি মানষে ডরে বাসার মধ্যে হামায় গেসি গা।
তিনি বলেন, এমন এক রোগ আইছে এখন ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো ওষুধ নাই। এই রোগ যার ঘরে আসে তারেই মাইরালবে দূরত্বে যদি না থাকে। আপনারা এখনো জানেন না ঢাকাতে যারা মারা গেছে। এরারে দাফন করার লাইগ্যা পরিবারের কোনো লোক আইতে দেয়া অইছে না। তোমরার লাশ দাফন করতে সরকার ও পুলিশ দিত না। এই অসুখ হইলে পরে ওই যে হাসপাতালে নিয়ে যাইবাইন লাশ আর চোখে দেখতাই না। অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত আমরার দেশো নাই এই
কথা শুনে আমি তোমারে এই কথা কইতে। আমি জানি কেউ কারো কথা শোনে না এই দেশে। তোমরা হয়তো আমার এই কথা হুনবাই কি হুনবা না আমি জানি না। তবে এইটা আমার দায়িত্ব।
তিনি প্রতিবেশীদের বলেন, তোমরারে যদি এই অসুখে কপালে মরবার লেখা থাকে, তোমরা যদি আগলডাইয়া গিয়া হাইড্ডা বেড়াও এন্দিওন্দি, এই রোগে যদি তোমরারে ধরে। তোমার খ্যান তুমি বুঝবা আমার হইল গিয়্যা দায়িত্ব যেইখ্যান ছিল আমি তোমাদের কইয়া দিছি।
লকডাউন নিয়া ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, একটা জিনিস তোমাদের বলছি লকডাউন হইলো একটা ইংলিশ শব্দ এইডা তোমরা বুঝতাই না। সারাদেশ এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইচ্ছা করলে এখন ঢাকা যাইতে পারবা না কোনো গাড়ি ঘোড়া দেখছনি রোডের মধ্যে।
তার স্ত্রী-সন্তান এবং মায়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তোমরা জানোনি আমেরিকার নিউইয়র্কের মধ্যে আমার মা, বউ, পোলাপান থাকে। ওইখানে ডেইলি ১২শ লোক মরতাছে। আমার বউ পোলাপানকে চেহারার মধ্যে চাউন যায় না। আশেপাশে যদি মানুষ মারা যায় তাহলে ভয়টা কেমন লাগে? বিরাট ভয় লাগে।
তিনি বলেন, তোমরারে আমার প্রতিবেশী হিসেবে বলছি, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে মানুষ মরে সাফ হয়ে যাইতাছে, আমরা বাঁচব কিনা জানি না। লন্ডনের প্রধানমন্ত্রীরও এই অসুখ হইছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকাইছে। যে অসুখ আইছে ধনী-গরিব মানে না। আগে অসুখ গরিবের হইত। কিন্তু এই অসুখ ধনী-গরিব কাউকেই মানে না। যারে পাইতাছে হাঁচি-কাশি, শ্বাসের মাধ্যমে হইতাছে।
তিনি বলেন, হাঁচি বোঝনি তোমরা? আমরা যে হাঁচি দিই। এই হাঁচির মধ্যে এই অসুখ হইবো। আরও একটা কথা কই, এই শিবিরের মধ্যে যদি কোনো একজনের এই অসুখ দেখা দেয়, এইখানে পুলিশ আইয়া কাউরে একটা দরজা দিয়ে বেরোতে দেবে না। এলাকার সবাইর ঘরের মধ্যে থাকতে হইবো তখন। একজন বাচ্চার এই রোগ হইলে তার মার হইবো, বাপের হইবো এবং পুরো পরিবারই হবে। আর একজনের অইলে পুরো এলাকায় লকডাউন করে দিয়ে যাইবো পুলিশ।
সুমন বলেন, তোমরারে আইজ এইখানে আনছি আমি দুইটা কারণে একটা আমি প্রতিবেশী হিসাবে ঈমানী দায়িত্বে। আমি বাঁচব কিনা ঠিক নাই কেউ বাঁচবে কিনা তাও ঠিক নাই। জাতিসংঘ কইয়া দিছে আমরার দেশো কম করে হলেও ২০ লাখ মানুষ মারবো। তোমরারে যে কারণে আমি এইখানে আনছি তোমরা ঘরের মধ্যে হামাইয়া যাওগা। এই খবর সারা চুনারুঘাট বলতে পারবো কিনা জানি না কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে তোমরারে বলছি।
তিনি বলেন, দশ পনের দিন পরে যে অভাব দেখা দিব। রুজিতো কেউর হাতে নাই, তোমাদেরও নাই বাংলাদেশের নাই বিদেশেও বন্ধ। তোমরা দেহনা কোনো অ্যারোপ্লেন চলে না কোনো বড় বাস চলে না। যদি আমার ঘরে চাল থাকে, আমার কাছে যদি কোনো খাদ্য থাকে তাহলে শিবিরের কেউ না খেয়ে মরব না। আমি তোমরার সাথে আছি। যে খাদ্য দেওয়ান লাগে, অন্তত আমার ঘরে যদি এক কেজি চাউলও থাকে তোমাদেরকে নিয়ে ভাত খেয়ে মরবো।
সুমন বলেন, আমি যেটা বলি আগে তো বাঁচতে হবে। বাঁচতে হলে ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। অন্ততপক্ষে দুই সপ্তাহ বা পনেরো দিন ঘর থেকে বের হবে না। মহিলারা সাবান দিয়া হাত ধুইবা। বারবার হাত ধোওন লাগে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া লাগে। হাতের আঙুলগুলো যেন নাকে মুখে না যায়। এটা করা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, তোমরারে আল্লাহর ওয়াস্তে চাই, আমি এভাবে তোমরারে কখনো চাইছি না। আমার কাছে যথেষ্ট ত্রাণ আছে। তোমরা না খেয়ে মরবে না। তোমরারে কইয়া দিলাম রাস্তায় রাস্তায় লাশ পাইবা। দেইখো আর এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে বহু মানুষ না খাইয়া মরবো। তোমরা আমার প্রতিবেশী তোমরা না খাইয়া মরতা না আল্লাহর ওয়াস্তে তোমরা ঘরের মধ্যে যাও। আমরা সারা জীবন একসাথে থাকতেছি এখন এমন একটা রোগ আইছে এইডার ওষুধই একটা একজন আরেকজনের কাছ থেকে দূরে থাকো। শিবিরের একজন আক্রান্ত হলে শিবিরের পর শিবির লোক মারা যাবে।
লাইভ থেকে যাওয়ার আগে তিনি আরও বলেন, তোমরা এখানে সকালে আসছো এ জন্য তোমাদেরকে জানাই ধন্যবাদ। এটা তোমাদের সাথে আমার শেষ বক্তবো কিনা জানি না। কেডা থাকবা কেডা থাকবা না জানি না। কোনো কারণে করোনার পর যদি দেশ বালা হয় আমার তোমাদের সাথে দেখা অইবো।
সুমন বলেন, তোমাদের কারোর ঘরে যদি খাবার থাকে তাহলে আবার ত্রাণ নিওনা। যা আছে তা দিয়াই কষ্ট করে চলতে থাকো। যদি লাগে তাহলে আমার কাছে আসবা। ঘরে জিনিস থাকলে কেউ নিবা না। অন্যের হক নষ্ট করবা না।
এফএইচ/বিএ