চট্টগ্রামে করোনার সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে!
প্রতি মুহূর্তেই করোনার সামাজিক সংক্রমণের সংখ্যা, মাত্রা, পরিমাণ, পরিধি বাড়ছে। চট্টগ্রামে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকের বিদেশ প্রত্যাগতদের সংস্পর্শে আসার ইতিহাস নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে এরা সবাই মূলত সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও প্রশাসনের শতচেষ্টা সত্ত্বেও সামাজিক দূরত্বের ধার ধারছে না চট্টগ্রামের বাসিন্দারা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, বিআইটিআইডি আজ নতুন করে ৬০ জনের নমুনা পরীক্ষায় তিনজনকে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। নতুন যে তিনজন করোনায় আক্রন্ত হয়েছেন তাদের বাড়ি নগরের সাগরিকা, হালিশহর ও জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। আক্রান্তদের দুইজন পুরুষ ও একজন মহিলা।’
এদিকে জাগো নিউজের নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার সীতাকুণ্ডে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তারা বাড়ি সীতাকুণ্ড পৌর সদরের উত্তর বাজার গোডাউন পাড়া এলাকায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা তার বাড়ি লকডাউন করতে যাচ্ছি।’
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, নগরীর পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী এক নারী নতুন করোনা আক্রান্তদের একজন। তিনি সম্প্রতি শ্বাসকষ্টসহ সর্দি-জ্বর-কাশিতে ভুগছিলেন। গতকাল তার নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) পাঠনোর পরপরই তার বাড়িতে বসবাসরত ছয় পরিবারকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা গিয়ে বাড়িটি লকডাউন করেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ গণমাধ্যম কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, নগরের পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি একজন গার্মেন্টস কর্মী। সাগরিকা ফারুক ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন।
এই ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে ইতোমধ্যেই করোনার সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। কারণ এদের সবাই সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্তরের মানুষ। তাদের সঙ্গে আগের দুইজন করোনা রোগীর কোনো সম্পর্ক নেই করোনার সামাজিক বিস্তারের কারণেই এমন র্যামডম রোগী ধরা পড়ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকার মতোই চট্টগ্রামেও প্রবেশপথ বন্ধের দরকার ছিল। কারণ আপনি কাকে সাসপেক্ট করবেন? আমরা তো তাদের (বিদেশফেরত) সবাইকে কোয়ারেন্টাইনের শর্তেই ছেড়েছিলাম। কিন্তু উনারা বাড়ি গিয়েই সমাজে মিশে গেছেন। এখন আমরা আবারও ওমরাফেরতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করছি। এর বাইরে যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদেরও ট্রেস করার চেষ্টা চলছে। মানুষকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। বাজারে-মসজিদে কোথাও ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এভাবে হলে সামাজিক সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর শনাক্ত হওয়া দুইজনের বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর সীতাকুণ্ড উপজেলায় শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নমুনা সংগ্রহ করেছে। বর্তমানে তিনজনই বাসায় রয়েছে। তাদের অবস্থা বুঝে আইসোলেশন ওয়ার্ডে আনা হবে।
সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বলপ্রয়োগ করে মানুষকে আইন মানানো সম্ভব নয়। তাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। আমরা নরমে গরমে চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা শুনল তো? পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান, মার্কেট এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। চট্টগ্রাম নগরের সব প্রবেশপথ ও বিভিন্ন পয়েন্টে সিএমপির পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভোইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর রোগীর নিজের বাড়ি, আশপাশের আরও পাঁচটি বাড়ি, ওমরাফেরত মেয়ের বাড়ি, তার শ্বশুরবাড়ি, তাদের দুই নিকট আত্মীয়র বাড়ি ও প্রতিবেশীর গ্রামের বাড়িসহ ১৪টি বাড়ি লকডাউন করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। একইসঙ্গে বৃদ্ধের চিকিৎসায় জড়িত ছিলেন একম তিন চিকিৎসক ও ২০ হাসপাতাল কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। পরে ওই বৃদ্ধের ছেলে করোনা পজেটিভ বলে জানা গেলে সুপারশপ দি বাস্কেটের ৭৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন ও প্রতিষ্ঠানটি লকডাউন করা হয়।
গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির গ্রামের তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে জেলা প্রশাসন। একই দিন নগরীর পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির ছয় পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
আবু আজাদ/বিএ