করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলোকে অর্থ দিচ্ছে সার্ক
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা ও করোনা পরবর্তীতে অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সদস্য দেশগুলোকে অনুদান হিসেবে অর্থ দেবে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক। সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এসডিএফ) এর আওতায় এ অর্থ সহায়তা দেয়ার জন্য সার্কভুক্ত দেশসমূহের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গত ৫ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ সচিবের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ও প্রস্তাব প্রস্তুত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে সোশ্যাল উইন্ডো খাতে ব্যয়ের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে। এ তহবিল থেকে সার্কভুক্ত আটটি সদস্য দেশকে করোনা মোকাবিলায় বা করোনা পরবর্তীতে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনুদান দেয়া হবে।
এ তহবিল থেকে অনুদান দেয়ার জন্য উপযুক্ত প্রস্তাবনা চেয়েছে সার্ক। তবে প্রস্তাবের শর্ত হচ্ছে কমপক্ষে তিনটি দেশে মিলে একসঙ্গে প্রস্তাব প্রস্তুত করতে হবে। সার্কভুক্ত দেশেসমূহের সরকারি সংস্থা এর সুবিধা পাবে। এ তহবিল থেকে এনজিও বা বেসরকারি সংস্থা বা অন্যাদের সুবিধার জন্য সেসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এসডিএফ হতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য অনুদান দেয়া হবে। এছাড়া অনুদান বাস্তবায়ন, বণ্টন, পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদন সবকিছু বর্তমান এসডিএফ বোর্ড পলিসি অনুযায়ী হবে। এসব নির্দেশনা পরিপালন করে সার্কভুক্ত দেশের যোগ্য সংস্থার প্রতি প্রস্তাবনা পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এসডিএফ) গঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে করে সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে এর সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়ি যায়। পাশাপশি বিশ্বব্যাপী মানুষের যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে সেটি রক্ষা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। সে চিঠি অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত প্রস্তাব প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সংক্ষেপে সার্ক) দক্ষিণ এশিয়ার একটি সরকারি সংস্থা। এর সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং আফগানিস্তান। জনসংখ্যার ভিত্তিতে এটি সর্ববৃহৎ আঞ্চলিক সংগঠন।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে বিশ্বব্যাংক। জরুরি এ সহায়তা তহবিল থেকে করোনায় আক্রান্ত উন্নয়নশীল দেশসমূহকে অনুদান, স্বল্প সুদে ঋণ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের এ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণের লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আগামী জুন শেষে বিশ্বব্যাংক এ ফান্ড অনুমোদনের জন্য তাদের বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব উঠাবে। তার আগেই বাংলাদেশও প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত করতে কাজ করছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। গত ৩ মার্চ সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ওই যৌথ বিবৃতি দেন।
বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মানবিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংস্থা দুটি তাদের সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। তাদের বিশেষ নজর থাকবে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা জনগণের দেশগুলোর দিকে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আমাদের বিদ্যমান সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করব। জরুরি অর্থ সহায়তা, পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তাও দেয়া হবে। দ্রুত অর্থ সহায়তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে কোনো দেশের সহায়তার আহ্বানে সাড়া দেয়া যায়’।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বলেছে, সদস্য দেশগুলো নিজেদের জনগণের সহায়তায় সংস্থা দুটির কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করে, তা পূরণে তারা পুরোপুরি অঙ্গীকারবদ্ধ।
এমইউএইচ/এমআরএম