করোনা রোগী চিহ্নিত করবে ডাক বিভাগের অ্যাপ
মুহূর্তেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করতে একটি অ্যাপ নিয়ে এসেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। অ্যাপটির নাম ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’।
এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়ভীতি দূর করতে, সচেতনতা বাড়াতে এবং আশপাশের কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত কি না সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য দেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি। অ্যাপটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে টেলিটক এবং কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড।
রোববার (৫ এপ্রিল) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ অ্যাপটি আপাতত পরীক্ষামূলক স্তরেই রয়েছে। শিগগিরই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর এবং আইওএস স্টোরে পাওয়া যাবে। তবে ইতোমধ্যেই অ্যাপটি এপিকের মাধ্যমে (coronaidentifier.teletalk.com.bd) অনেকেই ব্যবহার করা শুরু করেছেন।
অ্যাপটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
মূলত অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর লোকেশন ব্যবহার করে কমিউনিটিতে করোনাভাইরাস কতটা সংক্রামিত হয়েছে, এর একটা স্ট্যাটাস জানা যাবে। আশপাশে কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বা কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তি রয়েছেন কি না সেই বিষয়ে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
ব্যবহারকারীর কাছাকাছি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি বা কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে খুবই সম্প্রতি যোগাযোগ হয়েছে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
অ্যাপটির মাধ্যমে কিছু টেস্ট করারও সুযোগ রয়েছে। ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী বুকের এক্স-রে ইমেজ অনলাইনে ওয়েব এবং মোবাইলে আপলোড করে মিনিটের মধ্যে করোনা টেস্টের রেজাল্ট পাবে। ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত এমন শনাক্ত হয়ে থাকলে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর ফলে দীর্ঘ সময় টেস্টের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক দফায় আমার বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে একটি সহজলভ্য অ্যাপ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কারিগরি টিম দিয়ে দ্রুত এটার বাস্তবায়নও করি। আশা করছি, এই অ্যাপ আমাদের দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাপটির আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত আমাদের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিম কাজ করছে। দেশ-বিদেশে যারা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তাদের কার্যক্রমগুলো আমরা খোঁজখবর রাখছি। অ্যাপটির পরবর্তী সংস্করণে স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে আরও কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হবে।’
অ্যাপটির কারিগরি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ফারুক বলেন, ‘মূলত ব্লুটুথ ও লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমেই কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ছয় ফুট দূরত্বের মধ্যে রয়েছেন কি না তা জানা যাবে এই অ্যাপটির মাধ্যমে।’
প্রযুক্তির ব্যবহার করে কয়েকটি দেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইন প্রোগ্রাম এবং প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এখন পর্যন্ত চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশেও বহুসংখ্যক মানুষ কোয়ারেন্টাইনে আছেন, যাদের ম্যানুয়ালি ট্র্যাক করা খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে আমাদের ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ সিস্টেম অ্যাপ বড় পরিসরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদেরও ট্র্যাক করতে সহায়তা করবে।’
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ক্রমেই বেড়ে চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত দেশে ৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ভাইরাসে প্রাণ গেছে ৯ জনের।
এদিকে, দেশে করোনার বিস্তার ঠেকাতে তিন দফায় ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ভাইরাসের বিস্তার থেকে দেশব্যাপী মানুষজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরএমএম/এফআর/এমএস