করোনাভাইরাস সংক্রমণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা!
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ক্রমেই রাজধানী ঢাকা অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ১৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ১২ জন।
গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৬ জন। আজ রোববার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত ৮৮ জনের মধ্যে ঢাকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮ জন অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৪২ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, রাজধানী ঢাকা অধিক ঘনবসতিপূর্ণ হওযায় রোগটির দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ বারবার দেশবাসীকে অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে নির্দেশনা দিলেও নগরবাসীর অনেকেই নির্দেশনা মানছেন না। নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে তারা রাস্তাঘাটে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, অত্যাবশ্যক প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে বের হওযার পরামর্শ দিলেও তা মানছেন না। এ হিসেবে এ মুহূর্তে ঢাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে খুবই ধীর গতিতে হলেও বর্তমানে সামাজিক সংক্রমণ ঘটছে।
তিনি জানান, সারাদেশে পাঁচটি ক্লাস্টার (নির্দিষ্ট একটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়া) নারায়ণগঞ্জ ১টি, মাদারীপুরে ১টি, গাইবান্ধায় ১টি ও রাজধানীতে ২টি ক্লাস্টারে সংক্রমণ ঘটেছে। রাজধানীতে মিরপুরের টোলারবাগ ও বাসাবোতে সামাজিকভাবে সংক্রমণ ঘটেছে। এক্ষেত্রে রাজধানীতেই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে। অবশ্য ইতোমধ্যেই টোলারবাগ ও বাসাবোতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার পাশাপাশি ওই এলাকা লকডাউন করে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তির ভূমিকা বেশি। এক্ষেত্রে সরকার সংক্রমণরোধে যত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপই গ্রহণ করুক না কেন ব্যক্তির সচেতনতাই অন্যকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশে সীমিত পরিসরে হলেও সামাজিক সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণরোধে অনেকেই সতর্কতামূলক নির্দেশনা মেনে চলছেন না। এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি জানান, আক্রান্ত রোগীদের দুইভাবে হাসপাতালে ও বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে হোমকেয়ার গাইডলাইন অনুযায়ী মৃদু লক্ষণ ও উপসর্গ (সামান্য জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি) থাকা রোগীদের বাসায় রেখে চিকিৎসা করা হয়। তাদের একটি নির্দিষ্ট ঘরে আইসোলেশন রেখে চিকিৎসা করা হয়। এদের ক্ষেত্রে শুধু তারাই নন, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিদিন ফোন করে সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাওয়া হয়।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এভাবে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যেই অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাড়ি থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে কারও শ্বাসকষ্টসহ অন্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ