‘তিন দিন ঘরে থাইক্যা আজকা বাইর হইছি’
করোনাভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউনে অনেকটাই স্থবির রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে অতি দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এবং কোনো দিক থেকে সহযোগিতা না পেয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় নামছেন তারা। এমনই একজন তেজগাঁওয়ের আনোয়ার হোসেন।
প্রকৃতির বেখেয়ালে দুই হাত অকেজো তার। পা দু’টোও স্বাভাবিক নয়। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই তাকে পুরো সংসার চালাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু করোনার বিস্তাররোধে সরকার ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলার পর গত তিন দিন ভিক্ষা করতে বের হননি আনোয়ার। ঘরে ঢুকে যাওয়ার আগে যে চাল-ডাল কিনেছিলেন, এই তিন দিনে তা ফুরিয়ে গেছে। উপায়ান্তর না দেখে রাস্তায় বের হয়েছেন তিনি।
সোমবার (৩০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কারওয়ান বাজার এলাকায় দেখা যায় আনোয়ার হোসেনকে। ফুটপাতে দাঁড়িয়েছিলেন। মুখে ছিল মাস্ক। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিবারে আমরা তিনজন। আমার মেয়ে, স্ত্রী ও আমি। আধা ঘণ্টা আগে বের হইছি। বেশি টাকা-পয়সা পাই নাই। মানুষ নাই।’
তিনি বলেন, ‘তিন দিন ঘরে থাকার পর আজকা বাইর হইছি। চাল-ডাল অল্প কিইন্যা রাখছিলাম, শ্যাষ। হের লেইগ্যা রাস্তায় বের হইছি। পাই নাই তো অহন তুরি (এখন পর্যন্ত তেমন কিছু পাইনি), পাইলে আবার বইসা থাকতাম ৫-৭ দিন।’
আনোয়ার হোসেনের মতো অনেক দুস্থ এবং রিকশা চালক, দিনমজুর, মিনতি (মাথায় করে মালামাল নিয়ে যাওয়া), সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক, মোটরসাইকেল চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় বের হয়েছেন ক্ষুধার জ্বালায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার বিস্তাররোধে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে যেমন কঠোর হওয়া দরকার, তেমনি এসব দুঃস্থ-অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা দরকার সরকার, জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের বিত্তবানদের। নইলে ক্ষুধার তাড়না ঘরে থাকতে দেবে না এই দুস্থদের।
পিডি/এইচএ/এমএস