ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মাইকিং শুনে থানায় ফোন, ৩০ মিনিটেই বাজার নিয়ে হাজির পুলিশ!

আবু আজাদ | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ১১:০২ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশব্যাপী চলছে অঘোষিত লকডাউন। এ লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দিনরাত কাজ করছে পুলিশও। অলি-গলিতে টহল দেয়া ছাড়াও সচেতনতামূলক মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন নিজে মাইকিং করে নগরবাসীর উদ্দেশে বলছেন, ‘আপনারা ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। কোনো প্রয়োজনে ৬১৯৯২২ এই নম্বরে কোতয়ালী থানায় ফোন করে সহায়তা নিন। আমরা আপনার প্রয়োজনে চলে আসব। আপনি প্রয়োজন পূরণ করব।’

পুলিশের সে আহ্বান শুনে ঘোষিত নম্বরে ফোন করেন এক নারী। তিনি জানান, তার স্বামী একজন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সম্প্রতি জাহাজ থেকে ফেরার পর তিনি সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এ অবস্থায় তার পরিবারের জন্য বাজার-সদাই করা খুব প্রয়োজন। কিন্তু লকডাউনের কারণে তিনি বাসা থেকে বের হতে পারছেন না।

সমস্যা শুনে টিম কোতয়ালীর এক পুলিশ সদস্য গিয়ে ওই নারীকে প্রয়োজনীয় বাজার করে দেন। পুলিশের এমন মানবিক আচরণ বিস্মিয় প্রকাশ করেছেন ওই গৃহবধূ।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরের কোতয়ালী থানা মিরিন্ডা লেইনে এ ঘটনা ঘটে।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিরিন্ডা লেনের মিসেস রেবেকা সুলতানা (৩০) আমাদের হেল্প লাইনে ফোন করে জানান, তার স্বামী আজাহারুল ইসলাম (৩৭) একজন ক্যাপ্টেন। তিনি সম্প্রতি জাহাজ থেকে বাসায় ফিরলেও করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকায় সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন। বাসায় আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই। এই লকডাউনে দুই মেয়ে নিয়ে তিনি অসহায় অবস্থায় আছেন। বাজারে যেতে পারছেন না।’

‘খবর পেয়েই আমি এক পুলিশ সদস্যকে তার বাসায় পাঠাই। পরে সেই পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী বাজার-সদাই করে দেয়া হয়েছে,- বলেন ওসি মহসিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে জাগো নিউজকে বলেন, “আমিতো অবাক! এমনও হয়! রাস্তায় বারবার মাইকিং হচ্ছিল, ‘থানায় ফোন করে সহায়তা নিন। আমরা আপনার প্রয়েজনে চলে আসব। আপনি প্রয়োজন পূরণ করব’ সাহস করে ফোন দিলাম থানায় বললাম, আমার স্বামী একজন ক্যাপ্টেন। তিনি সম্প্রতি জাহাজ ফেরায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন। লকডাউনের কারণে বের হতে পারছি না, কিন্তু আজ বাজার করা খুব প্রয়োজন। বিশ্বাস করুন মাত্র ৩০ মিনিটেই তারা আমাকে বাজার করে এনে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণত ফিরিঙ্গিবাজার, কোতয়ালী থানা এলাকা থেকে বাজার করি। গত দুইদিন একেবারে বের হয়নি। ভয় হচ্ছিল পুলিশ যদি লাঠিপেটা করে। অথচ সেই পুলিশই আমাদের বাজার করে দিল! ইশ! সবসময় যদি এমন হতো।’

এ সময় তিনি জানান, ওই পুলিশ সদস্য মাছ ও নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে ১১শ টাকার বাজার তাকে করে দিয়েছেন।

ওসি মোহাম্মদ মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ সারাদিন টিম কোতয়ালী নগরের বিভিন্ন এলাকায় টহলের পাশাপাশি সচেতনতামূলক মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করেছে। বেশির ভাগ মানুষই লকডাউন মেনে চলছে। তবে অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের বল প্রয়োগ না করে ভিন্ন উপায়ে ঘরে ফিরিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘রাস্তায় আড্ডা দিতে দেখলেই দাঁড় করিয়েছি। জিজ্ঞেস করেছি, রাস্তায় কেন? কাজে বের হলে কিছু বলিনি। কিন্তু যারা আড্ডা দিতে বের হয়েছে তাদের বাবা-মা কে ফোন করেছি তাদের সামনেই। সন্তান কেন করোনা ঝুঁকিতে বাইরে ঘোরাফেরা করছে তা জানতে চেয়েছি। তারা এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আর হবে না বলেছে। আমার কাছে এটি কার্যকর মনে হয়েছে।’

আবু আজাদ/বিএ