করোনার ছোবলে বর্ষবরণ হতে পারে উৎসবহীন
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সারা পৃথিবীর মতো কাঁপছে বাংলাদেশও। এর সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি কাটাচ্ছে দেশের মানুষ। সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ। আর ১৮ দিন পর ১৪ এপ্রিল বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে করোনায় ভয়ার্ত বাঙালি বাংলা ১৪২৭ সনকে বরণ করবে উৎসবহীনতায়।
এমনই আভাস মিলেছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৭ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়। সম্প্রতি সভাটি সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে হয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নববর্ষের জনসমাগমের সব ধরনের কর্মসূচি বাতিল করা হতে পারে বলে সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে।
এ ছাড়া সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা নববর্ষ উদযাপনে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। পরিস্থিতি বুঝে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে উদযাপন করব না করব। আরও কিছুটা সময় আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পরবর্তী সময়ে আবার সবাইকে নিয়ে সভায় বসতে পারি, আবার আমরা নিজেরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রা কিছুই হবে না।’
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, সভায় জানানো হয়- আবহমান কাল ধরে বাঙালি অধ্যুষিত জনপদে সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। ১৪১৭ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলা নববর্ষ জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হচ্ছে। উৎসবের নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়। সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের বিস্তার এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় ব্যাপক জনসমাগম হবে এমন অনুষ্ঠানগুলো আপাতত এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রতিটি অনুষ্ঠানে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। তাই এ বছর নববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে চারুকলা অনুষদ পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অব্যাহত থাকলে মঙ্গল শোভাযাত্রা স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে জনসমাগম ছাড়া ধারণ করা অনুষ্ঠান প্রচারের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে।
আরও সিদ্ধান্ত হয়, রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সংগঠন ছায়ানট। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে আগেই একটি সময় নির্ধারণ করে রমনা বটমূলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা পহেলা বৈশাখে প্রচার করা হবে। সেক্ষেত্রে অনুষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, বেতারে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিটিভির মাধ্যমে সম্প্রচার করবে।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকলে নববর্ষে জেলা-উপজেলায় বৈশাখের শোভাযাত্রা আয়োজন, কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বৈশাখী মেলা ও অন্যান্য সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনও স্থগিত রাখা হতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব জেলা-উপজেলায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সব জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি সভা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন বিষয়ে বিকল্প পন্থা নির্ধারণ করা হবে বলেও কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ে জানান, দেশে করোনাভাইরাসে আরও একজন মারা গেছেন। ফলে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। অন্যদিকে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি, তাই আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯-ই আছে। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও দুজন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন সাতজন।
আরএমএম/জেডএ/এমকেএইচ