করোনাযুদ্ধে সোচ্চার মন্ত্রী থেকে ইউপি মেম্বার, তবু নেই স্বস্তি!
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছে সরকার। সরকারের মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাইকে সম্পৃক্ত করে শহর, বিভাগ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদে পৃথক কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় সতকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশফরত যাত্রীদের হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা, সারাদেশের হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধাসহ পৃথক আইসোলেশন ইউনিট ও ওয়ার্ড প্রস্তুত করা, সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত ও কীট সরবরাহ নিশ্চিত করা, চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ করা, উদ্বিগ্ন মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেয়ার জন্য হটলাইন চালু, প্রয়োজনের ভিত্তিতে স্কুলসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, শপিং মলসহ মার্কেট বন্ধ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তবে সরকারের এতসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অস্বস্তিতে রয়েছে মানুষ। প্রবাসফেরত বিশেষ করে ইতালি প্রবাসীরা দেশে ফিরে হোম কোয়োরেন্টাইনে না থেকে ঘুরে বেড়ানোর কারণে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার দাবি, এখনও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি) হয়নি। তবে তার এ কথায় আস্থা রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, সরকার তথ্য গোপন করছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘যুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলার এ যুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জয়ী হতে হবে।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সভাপতি ও সচিবকে (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) আসাদুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৪২ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। এ কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরাও রয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি ছাড়াও আরও ছয়টি কমিটি কাজ করছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি মেয়রকে সভাপতি ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে ১২ সদস্যের, বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও বিভাগীয় পরিচালককে সদস্যসচিব করে ১৪ সদস্যের, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও সিভিল সার্জনকে সদস্যসচিব করে ১৪ সদস্যের, পৌরসভা পর্যায়ে পৌরমেয়রকে সভাপতি ও পৌরসভার সচিবকে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের এবং ইউনিয়ন পর্য়ায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে সদস্যসচিব করে ৯ সদস্যের পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দাবি, বিশ্বের অনেক দেশ করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে হিমশিম খেলেও বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত রোগটি আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রোববার (২২ মার্চ) আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত ৫৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে তিন জনসহ মোট ২৭ জন করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত (রোববার) সারাদেশে ২৩ হাজার ৬৮৪ জনকে কোয়ারেন্টানে রাখা হয়। তাদের মধ্যে চার হাজার ৬২১ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৯ হাজার ৬৩ জন। আইসোলেশনে থাকা ১৮৭ জনের মধ্যে ১৪৭ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে আইসোলেশন রয়েছেন ৪০ জন।
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৮৫টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, এখানে মোট ১৬ হাজার ৫০৫ জনকে সেবা দেয়া যাবে।
তিনি বলেন, সারাদেশে আইসোলেশনের জন্য চার হাজার ৫১৫টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা শহরে এক হাজার ৫০টি বেড রয়েছে। ঢাকা শহরের কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরা ও মিরপুর এবং যাত্রাবাড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ২৯টি আইসিইউ প্রস্তুত করা হয়েছে। আশকোনা হজ ক্যাম্পে ৩০০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য সাতটি স্থান নির্দিষ্ট করা হচ্ছে।
এমইউ/এসআর/পিআর