বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিককে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ
আল-কায়েদা ও আইএসে জঙ্গি নিয়োগে জড়িত সন্দেহে এক বছরের বেশি সময় ধরে আটক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমানের (২৫) স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামীকে মিথ্যা অভিযোগে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশটির (বাংলাদেশের) ক্ষমতাসীন দল ভুয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে সামিউনকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। ফলে তার স্বামী ন্যায় বিচার পাবেন না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সামিউনের স্ত্রী ফাতিমা রহমান (২৬) বর্তমানে উত্তর লন্ডনে থাকেন। তিনি বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে গেলে পুলিশ তার স্বামীকে আটক করে। তার স্বামীকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া কারাগারে তার নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সদস্যদেরকে ঘুষ প্রদানে চাপও প্রয়োগ করেছে কর্মকর্তারা। গত এক বছর থেকে তিনি সামিউনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং কথা বলার সুযোগ পাননি বলে জানান।
ফাতিমা রহমান গার্ডিয়ানকে বলেন, ক্যাব চালক সামিউনের সঙ্গে তার বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারের সদস্যদেরকেও সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি। আইসিস ও আল কায়েদায় বাংলাদেশে জঙ্গি নিয়োগে জিহাদি সংগ্রহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড অথবা আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। এবং বাংলাদেশে আদালতের সর্বোচ্চ শাস্তির বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ নেই।
ফাতিমা বলেন, সামিউনের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে সেবিষযে আমাদের কোনো ধারণা নেই। যার কারণে আমাদের সন্দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউই তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, এমনকি তার জামিন আবেদনের সময়ও নয়। এছাড়া তার জামিনের আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি সামিউনের খবর নিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, শারীরিকভাবে তাকে (সামিউনকে) সাজা দেয়া হয়েছে, কিন্তু মানসিকভাবেও তার অবস্থা তেমন ভালো নয়। এরকম কাউকে যদি এক বছর ধরে আটক রাখা হয় তাহলে এর প্রভাব তার ওপর পড়বে। একইসঙ্গে উদ্বেগ এবং হতাশা তাকে ঘিরে ধরবে। সে ছিলো একজন সহজ-সরল মানুষ। সবার সঙ্গে মজা করতো।
ফাতিমা রহমান বলেন, আমি এক মিনিটের জন্যও বিশ্বাস করি না সে বাংলাদেশে কোনো ধরনের ন্যায়বিচার পাবে। আমি সেরকম চিন্তাও করি না সে ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় সেখানে কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশ সরকার বলছে, বিদেশ থেকে সন্ত্রাসীরা সেদেশে ঢুকছে। অর্থাৎ বিদেশিরা বাংলাদেশে যাচ্ছে অপরাধ সংগঠনের জন্য। আর এই সমস্ত মানুষ রাজনৈতিক ঘেরাটোপে আবদ্ধ।
তিনি আরো বলেন, সামিউন কখনই সহিংসতা বা সহিংস মানুষের সঙ্গে এক মত পোষণ করতো না। এটা খুবই আশ্চর্যজনক, শেষ পর্যন্ত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার কথা শুনতে হচ্ছে!
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে। তিন ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে করা আচরণ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিলো। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব্যাপকভাবে ওই ঘটনার সমালোচনা করেছিলো। দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিচারবহির্ভূত হত্যা ও কারাগারের ভেতরে বন্দী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলো।
বাংলাদেশের একজন আইনজীবী এইচএম নূরে আলম ব্রিটিশ নাগরিক সামিউনের হয়ে আইনী মোকাবেলা করছেন। এই আইনজীবী বলেন, আদালত তার মক্কেলকে জামিন দেয় নি। এটা ন্যায়ভ্রষ্ট ও ভুল। এমনকি বেশ কয়েকবার সামিউনের জামিন আবেদন করা হলেও হাইকোর্ট তা গ্রহণ করেনি। সামিউনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। গত ১০ মাস ধরে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কর্মীরা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আটক ব্রিটিশ নাগরিক সামিউনকে সহায়তা করছে।
এসআইএস/পিআর