ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনায় রু‌টিন জীবন তছনছ স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ০১:২৫ এএম, ১৭ মার্চ ২০২০

'হ্যালো, সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। কল রিসিভ করতে পারিনি। যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন। এখনও অফিস করছি। কখন যে বাসায় ফিরব বলতে পারছি না।'

এ প্রতিবেদক আজ (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে কল রিসিভ করেই ক্লান্তির স্বরে তড়িঘড়ি করে এ কথাগুলো বলেন।

ত‌দুপ‌রি এ প্র‌তিবেদক তার কাছে বর্তমা‌নে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, রোগীর সংখ্যা বাড়বে কিনা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা তো বাড়ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে না, এমনটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

'রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনের দোতলায় আজ 'ওয়ান-স্টপ মনিটরিং সেন্টার' খোলা হয়েছে। একই ছাদের নিচে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা সদস্যদের সমন্বয়ে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। আগামীকাল ‌নি‌জে এসে সরেজমিনে দেখে যান কীভাবে মনিটরিং কাজ চলছে'- এটুকু বলেই শুভরাত্রি বলে ফোনটা কেটে দিলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ । বি‌ভিন্ন প্রিন্ট, ই‌লেকট্র‌নিক ও অনলাইন গণমাধ্যমকর্মী‌দের স‌ঙ্গে স্বাস্থ্য বিভা‌গের ই‌তিবাচক, নে‌তিবাচক ও ভ‌বিষ্যৎ প‌রিকল্পনা নি‌য়ে খোলা‌মেলা কথাবার্তা ব‌লেন। সৎ ও সদালা‌পী হি‌সে‌বে খ্যা‌তি র‌য়ে‌ছে তার।

মাসখানেক আগেও স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা প্রতিদিন রুটিনমাফিক দিন কাটাতেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি দ্রুত রাতের খাবার সেরে রাত ১০টা থেকে সা‌ড়ে ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তেন। ভোরবেলা উঠে নামাজ পড়ে প্রাতঃভ্রমণ সেরে সকালের নাশতা করে চা খেতে খেতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাইল দেখে আবার কিছুটা বিশ্রাম নি‌য়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেতেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটলেও অধিকাংশ দিনই সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে আসতেন। রাতে দ্রুত খাবারপর্ব সেরে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতেন।

কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মাসখানেক যাবত স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের ছকেবাঁধা জীবন তছনছ হয়ে গেছে। সাতসকালে যে ব্যস্ততা শুরু হয় দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাতেও ব্যস্ততা শেষ হয় না। যে মানুষটি রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তেন এখন রাত ১টার আগে ঘুমাতে যেতে পারেন না। করোনা দুশ্চিন্তায় রাতে ভালো করে ঘুম হয় না। গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও রেলস্টেশন দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছয় লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি যাত্রী এসেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগ) মো. আসাদুল ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে নতুন থার্মাল স্ক্যানার মেশিন কেনা ও স্থাপন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা, চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) ব্যবস্থা করা, ক‌রোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরি প্রস্তুত রাখা, নতুন ধরনের এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসচেতনতামূলক লিফলেট তৈরি করা ইত্যাদি বাস্তবায়ন করতে অধঃস্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা, সরকারের নীতিনির্ধারকদের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ততার সময় কাটছে তার।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নতুন ধরনের এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আপাতত করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে প্রবাসীদের আসতে নিষেধ করে আসছিলেন। তারপরও তাদের দেশে ফেরা বন্ধ হয়নি। আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরত আসা মানুষদের ১৪ দিন নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছায় অন্তরীণ থাকার অনুরোধ জানালেও তারা মানতে চাইছেন না। অথচ সংক্রমণ প্রতিরোধে বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণ থাকাটা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারের একার পক্ষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এই রোগটি প্রতিরোধে দল-মত নির্বিশেষে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

এমইউ/বিএ/এমআরএম